মোঃ রজ্জব আলী।। ‘আইনের যিশু সিরাজুল হক’ বইয়ের লেখক জনাব আপেল মাহমুদ। যিনি একজন সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক। আজ থেকে ২০ বছর আগে ২০০১ সালে কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ক্রাইম রিপোর্টার সম্পাদক জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরীর সাথে একবার ঢাকায় ওনার বাসায় গিয়ে চা নাস্তা খেয়েছিলাম। সে থেকে আজো নামটা মনে আছে। একবার শুনে ছিলাম ওনি কালের কন্ঠে ছিলেন। এখন কোথায় আছেন জানিনা। কাকতালীয় ভাবে জনাব আপেল মাহমুদ আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড। আজ হঠাৎ ওনার টাইম লাইনে চোখ আটকে যায় ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ’ শিরোনামে একটি লিখা দেখে। এখানে তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ছিলেন কুমিল্লা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এডভোকেট সিরাজুল হক এমপি। খন্দকার মোশতাকের ডাকা এমপিদের বঙ্গভবনের প্রথম অধিবেশনে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আমি আপনাকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে মানি না। আপনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারি।’ আপেল মাহমুদ এর লিখাটি নিম্নে হুবহু উল্লেখ করা হলো:

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ!!!
‘আইনের যিশু সিরাজুল হক’ বইয়ের কাজ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে অনেক অকথিত তথ্য জানতে পারি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংস হত্যার পর পরই তিন বাহিনী প্রধান খুনি মোশতাকচক্রের আনুগত্য প্রকাশ করেন। সিংহভাগ আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। দেশের বুদ্ধিজীবিরা সুর পালটে নতুন ফতুয়া দিতে থাকেন।
এর মধ্যে একমাত্র কুমিল্লা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এডভোকেট সিরাজুল হক এমপি মোশতাকের ডাকা এমপিদের বঙ্গভবনের প্রথম অধিবেশনে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করে বলেন, ‘আমি আপনাকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে মানি না। আপনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারি।’ একথা বলার পর অধিবেশনে হট্টগোল লেগে যায়। যার কারনে অধিবেবশ পন্ড হয়ে যায়।
প্রথম অধিবেশনটি হয়েছিল ১৬ অক্টোবর। সে অধিবেশন বয়কট করেন সাজেদা চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সায়ীদসহ কেউ কেউ। কিন্তু এমপি সিরাজুল হক অধিবেশন বয়কট না করে সেখানে উপস্থিত হন। এসে দেখেন, খুনি মেশতাককে ঘিরে আছেন খুনিচক্রের ডালিম, রশিদ, ফারুক, নূর, হুদা ও শাহরিয়ার। এদেরকে দেখেই এডভোকেট হক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বলেন, ‘ওরা এখানে কেন! খুনি মোশতাক ওদের বস হতে পারে। আমাদের নয়।’ তখন কয়েকজন এমপি সিরাজুল হকের সঙ্গে প্রতিবাদ জানান। শুরু হয় হৈচৈ। তখন আগত এমপিরা অধিবেশন ছেড়ে চলে যান।
ডায়াসে দাঁড়িয়ে তিনি যখন প্রতিবাদ করছিলেন, তখন মোশতাক সেখানে গিয়ে সিরাজুল হকের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে হক বলেন, ‘আমার প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু। আপনি আমার প্রেসিডেন্ট নন। আপনি খুনি। আপনি কত বড় প্রেসিডেন্ট, আপনি বঙ্গভবনের বাইরে এসে দেখেন।’
সিরাজুল হকের এই প্রতিবাদের পর কর্ণেল শাফায়েত জামিল ও খালেদ মোশাররফ আরো বেশি করে মানসিক শক্তি পান। ওদের তৎপরতার কারনে ডালিম-ফারুক-রশিদ গং দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
চান্দিনার এমপি ও চীফ হুইপ সদ্য প্রয়াত আলী আশরাফ বলেছেন, সিরাজুল হক যখন খুনি মোশতাকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন, তখন খুনিরা সামরিক পোশাকে সেখানে ঘুড়ে বেড়াচ্ছিল।
প্রয়াত প্রবীন সাংবাদিক এবং বঙ্গবন্ধুর সহচর এবিএম মুসা তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, সিরাজুল হক যখন মুজিব হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে জ্বালাময়ী ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন দুইজন মেজর উত্তেজিত হয়ে ওঠেছিলেন। মোশতাকের ইশারায় মেজররা সেখান থেকে চলে যান। এর পর সিরাজুল হক মোশতাককে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেন কেন?’
মোশতাকের জবাব ছিল, এই হত্যাকান্ডের প্রয়োজনীয়তা কি তা জনগন যথাসময়ে জানতে পারবে।’
সিরাজুল হক তখন বলেন, ‘ প্রয়োজনীয়তাটা কি ছিল তা জানতে আমি অপেক্ষা করবো। তা না জানা পর্যন্ত আমরা আপনাকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারি না।’

প্র/স