1. provatsangbad@gmail.com : প্রভাত সংবাদ : প্রভাত সংবাদ
  2. mdjoy.jnu@gmail.com : dainikjoybarta.online : Shah Zoy
সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ০৫:৪১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরে ঐকতান পরিবার’র রবীন্দ্র জয়ন্তী স্মরণানুষ্ঠান কুমিল্লায় পশুরহাটের ইজারাদারদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতবিনিময় সভা কুমিল্লায় আগ্নেয়াস্ত্র সহ কিশোর গ্যাং লিডার গ্রেফতার কুমিলা বুড়িচংয়ে খামার ব্যবস্থাপনা ও সম্প্রসারণ বায়োগ্যাস প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধন কুমিল্লা গোলাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে বিএসএফ কুমিল্লায় পৃথক দু’টি লাশ উদ্ধার কুমিল্লা বুড়িচংয়ে অগ্নিকাণ্ডে ৪টি ঘর পুড়ে ছাই; ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়ায় ডোবার পানিতে পরে মামা ভাগনের মৃত্যু কুমিল্লা বুড়িচংয়ে ৩৬ টাকা দরে বোরো ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু কুমিল্লা বুড়িচংয়ে আ’লীগ নেতা সাহেব আলী চেয়ারম্যান গ্রেফতার

নিজেকে একটু সতেজ নির্মল করে তুলতে ঘুরে আসুন কুমিল্লা (দ্বিতীয় পর্ব)

  • প্রকাশিত: রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১
  • ৩২০ বার পড়া হয়েছে

মোঃ রজ্জব আলী।। করোনা মহামারীর কারনে যাদের জীবন মান থমকে গিয়েছে তাদের একটু নির্মল সতেজ করে তুলতে প্রাচীন জনপদ কুমিল্লায় ঘুরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলাম। গতকালকের প্রথম পর্বে উল্লেখ করেছিলাম কুমিল্লার কিছু দর্শণীয় স্থানের কথা যেখানে ভ্রমন করলে নিশ্চিত আপনার দেহ মন সতেজ নির্মল হবেই। আজ আপনাদের জন্য আরো কিছু স্থানের কথা বলবো ঘুরে আসতে পারেন অনায়াসেই।

ময়নামতি জাদুঘর : কুমিল্লায় প্রাপ্ত প্রত্ননিদর্শন গুলো সংরক্ষণের লক্ষ্যেই এখানে একটি জাদুঘর নির্মিত হয়। শালবন বিহারের পাশেই যাদুঘরটির অবস্থান। সময়ের ব্যবধানে এটি একটি সমৃদ্ধ প্রত্নত্বত্ত্ব জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। এই যাদুঘরে রয়েছে দর্শনীয় সব পুরাকীর্তি এবং বিভিন্ন রাজবংশীয় ইতিহাস, ব্যবহৃত তৈজসপত্র, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, ব্রোঞ্জের ছোট ছোট বুদ্ধ মুর্তি, দেব-দেবির মূর্তি, পোড়া মাটির ফলকচিত্র, অলংকৃত ইট, পাথরের মূর্তি, মাটি ও তামার পাত্র, দৈনন্দিন ব্যবহার সামগ্রী- দা, কাস্তে, খুন্তি, কুঠার, ঘটি, বাটি, বিছানাপত্র ইত্যাদি।
যাদুঘরের পাশে বন বিভাগ নতুন ২টি পিকনিক স্পট করেছে। বাংলাদেশে বেশ কয়টি জাদুঘরের মধ্যে ময়নামতি উল্লেখযোগ্য। এ জাদুঘরে স্থান পেয়েছে শ্রী ভবদেব মহাবিহার, কোটিলা মুড়া, চাপত্র মুড়া, রূপবান মুড়া, ইটাখোলামুড়া আনন্দবিহার, রানীর বাংলো ও ভোজ রাঙার বাড়ি ইত্যাদি থেকে উদ্ধারকৃত মূল্যবান পুরাবস্ত। জাদুঘরটি আকারে নির্মিত এবং পাশে বিশ্রাগার আছে ও ফুলের বাগান দিয়ে ঘেরা সবুজে সবুজে।

বার্ড : কুমিল্লায় ঘুরতে আসবেন অর্থচ বার্ড দেখবেন না, এক বেলা খাবেন না বার্ডের সেল্ফ সার্ভিস ক্যাফেটেরিয়াতে, তা কি করে হয়। ছায়া সুনিবিড়ি মমতা ঘেরা রাস্তা। দুপাশে নানা রকমের নানা রংয়ের ফুল ও ফলের বাগান। পাখির কুজন আর ফুলের গন্ধে চারদিক ঘিরে রেখেছে বার্ডকে। এখানে ঘুরতে আসা অনেক পর্যটকই হয়তো প্রতিষ্ঠানটির নাম শুনলে ভাবেন এখানে অনেক অনেক পাখি থাকবে, মনে করবেন পাখির কলকাকলীর জন্যেই হয়তো এর নামকরণ ‘বার্ড’।

নীলাচল পাহাড় : বার্ডের ভিতরে রয়েছে নীলাচল পাহাড়। নির্জন প্রকৃতির এক অকৃত্রিম ভাললাগার জায়গা হচ্ছে নীলাচল। একটু পাহাড়ী স্বাদ পাবেন ভ্রমণপিপাসুরা। ছোট ছোট গাছ আর একটু উচু পাহাড় আপনাকে মনে করিয়ে দেবে কত প্রাচুর্যে ভরা আমাদের প্রকৃতি।

লালমাই পাহাড় : লংকার রাজা রাবণ রামের স্ত্রী সীতাকে হরণ করে নিয়ে গেলে রাম তার ভাই লক্ষণকে নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালায়। এতে লক্ষণ আহত হলে কবিরাজ বিশল্যাকরণী গাছের পাতা হিমালয় পাহাড় থেকে সূর্যোদয়ের পূর্বে এনে দেয়ার কথা বলেন। হনুমান গাছটি চিনতে না পেরে পুরো পর্বত নিয়ে আসে এবং কাজ শেষে পাহাড়টি যথাস্থানে রাখতে যাওয়ার সময় অনেকটা আনমনা হয়ে যায়।


ময়নামতি পাহাড় : কুমিল্লা-সিলেট সড়কের বুড়িচং এলাকায় ময়নামতি পাহাড় অবস্থিত। চতুষ্কোণ এ পাহাড়টির উপরিভাগ সমতল, উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। এখানকার আবিষ্কৃত স্থাপত্য নিদর্শনগুলো আনুমানিক ১২শ-১৩শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।

ধর্ম সাগর : জনগণের সুপেয় পানীয় জলের সুবিধার জন্য ১৪৫৮ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের অধিপতি মহারাজ ধর্মামাণিক্য একটি দীঘি খনন করেন, যার নামকরণ করা হয় ধর্মসাগর। দীঘির একপাশে তাম্রলিপি পাঠ আছে ফলকে। বিশ্রামের জন্য রয়েছে বেদি যা অবকাশ নামে পরিচিত। দীঘিটির বাম পাস ঘেঁষে রয়েছে ড. আখতার হামিদ খানের বাংলো যা রানীকুঠির নামে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে যার অবদানে বাংলা আজ বাংলা নামে পরিচয় এমন কৃতী সন্তান ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের বাড়ি, বিপ্লবী অতীন্দ্র মোহন সেনের বাড়ি এবং রয়েছে নজরুল ইসলামের কুমিল্লা জীবনের অনেক স্বাক্ষর।

গোমতী নদী : কুমিল্লাবাসীর সুখ-দুঃখের সাথী গোমতী নদী। এটি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আপনি সন্ধ্যে বেলায় গোমতীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন নগরীর পাশে বানাশুয়া বা চান্দপুর ব্রিজ কিংবা টিক্কাচর ব্রীজ  গিয়ে।

কাকড়ী নদী : খরস্রোতা এ নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ নদী থেকে সংগৃহীত বালি পাকা ইমারত নির্মাণের কাজে বেশ উপযোগী।

দীঘির জেলা কুমিল্লা : ব্যাংক ও ট্যাংকের শহর হিসেবে পরিচিত এই কুমিল্লা। উপমহাদেশের প্রথম ব্যাংক স্থাপিত হয়েছিলো কুমিল্লার কান্দির পাড়ে। ওই ভবনটিতে বর্তমানে পূবালী ব্যাংকের শাখা চালু আছে। আর ছোট-বড় অসংখ্য দীঘি রয়েছে এই শহরে। এজন্যেই একে জলাধার বা ট্যাংকের শহর হিসেবে পরিগণিত করা হতো। এর মধ্যে নানুয়ার দীঘি, উজির দীঘি, লাউয়ার দীঘি, রানীর দীঘি, আনন্দরাজার দীঘি, ভোজ রাজার দীঘি, কৃষ্ণসাগর, কাজির দীঘি, দুতিয়ার দীঘি, শিবের দীঘি ও জগন্নাথ দীঘির নাম উল্লেখযোগ্য।

বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন (টাউন হল) : ত্রিপুরা জেলার মহারাজ ‘বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর’ ১৮৮৫ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এফ এইচ স্ক্রাইন এর অনুরোধে বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন নামে একটি পাঠাগার স্থাপন করেন। কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে ১০ বিঘা জমির উপর এটি নির্মাণ করেন। ১৮৮৫ হালড় ৬ মে প্রতিষ্ঠিত ওই ভবনই কুমিল্লার গনপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন, যা কুমিল্লা টাউন হল নামে পরিচিত।

জাতীয় কবি কাজীর স্মৃতি বিজড়িত দৌলতপুর : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ও তার স্ত্রী নার্গিস এর স্মৃতি বিজড়িত স্থান কবি তীর্থ দৌলতপুর। ১৯২১ সালে (বাংলা ২৩ চৈত্র ১৩২৭) নজরুল ইসলাম কুমিল্লা হয়ে মুরাদনগরের দৌলতপুরে আসেন এবং ৭১ দিন অবস্থান করেন। নজরুল দৌলতপুরে বসেই ১৬০টি গান এবং ১২০টি কবিতা রচনা করেন। উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলোর মধ্যে- বেদনা-অভিমান, অবেলা, অনাদৃতা, পথিক প্রিয়া, বিদায় বেলা প্রভৃতি। কবির পূর্ব পরিচিত আলী আকবর খানের আমন্ত্রণে কুমিল্লায় কবির প্রথম আগমন ঘটে মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে।
জাতীয় কবি কাজীর স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লা শহর : কবির দীপ্ত পদচারণা কুমিল্লাকে করেছে মহিমান্বিত। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত কবি ৫ বার কুমিল্লায় আসেন। এই ৫ বারে তিনি ১১ মাসের বেশি সময় কাটান কুমিল্লা শহরে। কবির বিয়ে থেকে শুরু করে দু’দফায় গ্রেফতার হন এ জেলায়। প্রমীলা দেবীর বাড়ি, ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ে কবিতা গানের আসর, ঝাউতলায় গ্রেফতার হওয়া, বসন্ত স্মৃতি পাঠাগার, নানুয়া দীঘির পাড়, দারোগা বাড়ি, ইউছুফ স্কুল রোড, মহেশাঙ্গন, কুমিল্লা বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন ও মাঠ, দক্ষিণ চর্থায় শচীন দেব বর্মনের বাড়ি, নবাব বাড়ি, ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের বাড়ি, নজরুল এভিনিউ, কান্দিরপাড়, ঝাউতলা, রানীর দীঘির পাড়, রেলস্টেশন, কোতোয়ালি থানা, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ বহু স্থানে কবির স্মৃতিচিহ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

ভাষা সৈনিক ধীরেন দত্তের বাড়ি : বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা/রাষ্ট্রভাষার প্রথম দাবিদার ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি কুমিল্লায়। নগরীর ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিবহুল বাড়িটি দেখে যেতে ভুলবেন না যেন। ১৯৪৮ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই সর্বপ্রথম আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গণপরিষদে আহ্বান জানান। ১৯৭১ সালে পাক হানাদাররা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সূত্র : চ্যানেল আই অনলাইন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন