ছলিম উল্লাহ মেজবাহ।। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মৃত্যুর তিন দিন না পেরুতেই তার শূন্যপদে নিয়োগ নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিরোধ-অসন্তোষ। এ নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে পাশ কাটিয়ে আলাদাভাবে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সিনিয়র নেতারা। জাপার তরুণ নেতা শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব করার জন্য দলের একটি ক্ষুদ্র গ্রুপের তদবির জিএম কাদেরও আমলে নিতে পারেন- এমন গুঞ্জনেই সোমবার (৪ অক্টোবর) বৈঠকে মিলিত হন এই নেতারা।
শামীমকে যদি মহাসচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়, সেই ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নতুনভাবে জাপা পুনর্গঠনেরও হুমকি দিচ্ছেন তারা। পার্টির মহাসচিব নিয়োগের ব্যাপারে জানতে একাধিকবার কল করলেও তা রিসিভ করেননি জিএম কাদের।
অপেক্ষাকৃত নবীন নেতা শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব করার জন্য পার্টির একটি অংশের প্রচেষ্টায় বাধা দিয়েছেন অধিকাংশ সিনিয়র নেতা। তারা বলছেন, রাজপথের আন্দোলনে শামীমের কোনো অবদান নেই। দলের সুদিনে এসে এমপি হয়ে গেছেন। জাতীয় পার্টিতে অনেক ত্যাগী ও সিনিয়র নেতা রয়েছেন। তা ছাড়া জাতীয় পার্টির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলে তার মতো ‘একটি বাচ্চা ছেলে’ কখনোই মহাসচিব হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
অপরদিকে সোমবার দুপুরে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দেয়ার চিঠিতে স্বাক্ষর করার কথা ছিল। এই সংবাদটি পৌঁছালে তাৎক্ষণিক ফুঁসে ওঠেন দলটির সিনিয়র নেতারা। শামীমের নিয়োগ ঠেকাতে এবং সিনিয়র নেতাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে পার্টির মহাসচিব নিয়োগ দিতে গতকাল বিকাল ৩টায় রাজধানীর কলাবাগানে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দলটির সিনিয়র নেতারা।
বৈঠকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, মসিউর রহমান রাঙ্গা, মজিবুল হক চুন্নু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু, উপদেষ্টা জহিরুল আলম রুবেল উপস্থিত ছিলেন। জরুরি এ বৈঠকে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে যেন নিয়োগ না দেয়া হয়, এ ব্যাপারে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন। এমনকি এর জন্য কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির জন্য পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দায়ী থাকবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পার্টির সাবেক মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফহুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, শামীম পাটোয়ারীকে মহাসচিব করা হলে রংপুরের কোনো নেতাকর্মী মেনে নেবে না। বৃহত্তর রংপুরের তাকে অবাঞ্ছিত করা হবে এবং তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হবে। তাকে প্রতিহত করা হবে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান মজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, পাটোয়ারীর মতো একটি বাচ্চা ছেলেকে পার্টির মহাসচিব বানালে আমরা মেনে নেব না, নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না। কো-চেয়ারম্যান পদবির যে কাউকে মহাসচিব নিয়োগ দিতে হবে।
পার্টির আরেক কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বৈঠকে বলেন, পাটোয়ারীর মতো একটি বাচ্চা ছেলেকে মহাসচিব মেনে নেয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের কোনো নেতাকর্মীও তা মেনে নেবে না। সিনিয়র নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা না করে মহাসচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে জুনিয়র কাউকে কেউ মেনে নিতে পারে না।
সৌজন্যে : মানবকন্ঠ।