প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على رسوله الأمين، والعاقبة للمتقين ، أما بعد:
কিয়ামত হবে সুনিশ্চিত; কিন্তু কিয়ামত কখন হবে তা একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানেনা। একদা জিবরীল (আঃ) সাহাবাগণের উপস্থিতিতে (মানুষরূপে)আসল এবং রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করল, তখন তিনি বললেনঃ কিয়ামতের জ্ঞান প্রশ্নকৃত (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন কর্তা জিবরীল (আঃ) থেকে অধিক জানে না। তবে আমি তােমাকে কিয়ামতের আলামত বর্ণনা করছি। মহিলা তার মনিবকে জন্ম দিবে, বস্ত্রহীন, জুতাহীন ব্যক্তি জনগণের নেতা হবে, আর কাল উটের রাখালরা যখন উচ্চ দালান কোঠা নিয়ে পরস্পর গর্ব করবে (ইত্যাদি)। কিয়ামতের নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। (মুসলিম)

উল্লেখিত হাদীস থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, কিয়ামত হওয়ার সঠিক জ্ঞান এক মাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না। অবশ্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাগণকে কিয়ামতের পূর্বে বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত ফেতনা, আগন্তক কিছু ঘটনা এবং কিয়ামতের একেবারে নিকটবর্তী সময়ে প্রকাশ পাবে এমন কিছু আলামত সম্পর্কে সর্তক করেছেন।

হাদীসের ভান্ডারে কিয়ামত সম্পর্কে আমরা তিন প্রকারের হাদীস পেয়ে থাকি। প্রথমতঃ ঐ সমস্ত হাদীস যেখানে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময় অতিক্রমরে সাথে সাথে উম্মতের মধ্যে সৃষ্ট ফেতনা ও পথভ্রষ্টতার নিদর্শন, যেমন তিনি বলেছেনঃ “ইলম (ইসলামী শিক্ষা) উঠে যাবে। বর্বরতা বিস্তার লাভ করবে। মদপান বৃদ্ধি পাবে। প্রকাশ্যে ব্যভিচার হবে । ” (মুসলিম)

এ ধরণের হাদীস সমূহকে আমরা একিতাবের প্রথম অংশে ‘কিয়ামতের ফিতনা’ নামক অধ্যায়ে বর্ণনা করেছি। দ্বিতীয় অংশ ঐ সমস্ত হাদীস সম্পর্কে যেখানে তিনি সময় অতিক্রম হওয়ার সাথে সাথে কিছু কিছু পরিবর্তনের উল্লেখ করেছেন। যেমনঃ সমস্ত আরব ভূমিতে আবাদ হওয়া, ঝর্ণা প্রবাহিত হওয়া, সম্পদের প্রাচুর্যতা, ফোরাত নদী থেকে স্বর্ণের পাহাড় প্রাকাশ পাওয়া ইত্যাদি। এধরণের হাদীস সমূহকে আমরা এ কিতাবের দ্বিতীয় অংশে ‘কিয়ামতের ছােট আলামত’ নামক অধ্যায়ে শামিল করেছি। তৃতীয় ভাগ ঐ সমস্ত হাদীসের যেখানে কিয়ামতের একেবারে নিকটবর্তী সময়ে প্রকাশ পাবে এমন ঘটনাবলীর বর্ণনা। যেমন ইমাম মাহদীর আগমন, দাজ্জালের আত্ব প্রকাশ, ঈসা (আঃ) এর আগমন, ইয়াজুজ মাজুজের আগমন, ইত্যাদি, এসমস্ত হাদীস সমূহকে আমরা এ কিতাবের তৃতীয় অংশ ‘কিয়ামতের বড় আলামত’ নামক অধ্যায়ে শামিল করেছি। এভাবে এ কিতাবটি নিন্মোক্ত তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছেঃ

১1 কিয়ামতের ফিতনা । ২। কিয়ামতের ছােট আলামত। ৩। কিয়ামতের বড় আলামত। এ তিনটি বিষয়ের ওপর আমরা আগত পৃষ্ঠাসমূহে পৃথক পৃথক ভাবে আমাদের আলােচনা পেশ করব ইনশাইল্লাহ্।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের পূর্বে বিভিন্ন রকমের ফিতনা প্রকাশিত হবে। তিনি তার উম্মতদেরকে এ ফিতনা থেকে শুধু সর্তক করেছেন তাই নয় বরং এ ফিতনার কঠিনতা সম্পর্কেও স্বীয় উম্মতদেরকে স্পষ্টভাবে অবহিত করেছেন। এসম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কতিপয় হাদীসের উদ্ধৃতি নিন্মরূপঃ
১। “আগত ফেতনা সমূহকে আমি তােমাদের ঘরের ওপর বৃষ্টির ন্যায় বর্ষিত হতে দেখছি।” (বােখারী) ২। “কোন কোন ফেতনা এত দ্রুতগতি সম্পন্ন হবে যে (ইসলাম ,ঈমান,দ্বীন ) বলতে কোন কিছু বাকী রাখবে না। ” (মুসলিম)
৩।“কোন কোন ফেতনা এত কঠিন হবে যে তার দিকে উঁকি দাতাও সেখানে নিপতিত হবে।” (বােখারী)
৪। “কোন কোন ফেতনা এমন হবে যে তার দরজা সমূহে জাহান্নামের প্রতি আহ্বানকারী অবস্থান করবে। “( ইবনে মাযা) অর্থাৎ এ ফিতনায় লিপ্ত হওয়া মাত্রই মানুষ জাহান্নামে পতিত হবে
৫। “(ফেতনা এত কঠিন হবে) যে কোন ব্যক্তি সকালে মুমেন থাকলে, রাতে কাফের হয়ে যাবে আবার কোন ব্যক্তি রাতে মুমেন থাকলে, সকালে কাফের হয়ে যাবে ।”(তিরমিযী)
৬। “লােকেরা পৃথিবীর সম্পদের বিনিময়ে স্বীয় দ্বীন ও ঈমান বিক্রি করে দিবে।” (তিরমিযী)
৭। (ফেতনার সময়)“ ঈমানের ওপর অটল থাকা এত কঠিন হবে, যেমন আগুনের আঙ্গার হাতে রাখা কঠিন। ” (বায্যার)
দ্বীন ও ঈমানের জন্য এত কঠিন রূপ নিয়ে আগত ফেতনাসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা আগত অধ্যায় সমূহে পাওয়া যাবে, এখানে আমরা পাঠকদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিতনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করব, আর তা হল এলমে দ্বীন উঠিয়ে নেয়ার ফেতনা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক হাদীসে একথা বর্ণনা করেছেন যে, “কিয়ামতের পূর্বে দ্বীনি ইলম অর্থাৎ কোরআন ও সুন্নার জ্ঞান উঠিয়ে নেয়া হবে।” (মুসলিম)

চিন্তা করলে বুঝা যাবে যে, ইলমে দ্বীন উঠে যাওয়াই বাকী সমস্ত ফেতনার কারণ । শিরক, বিদআত, বে-আমল, মিথ্যা, চক্রান্ত, ধোকাবাজী, পিতা-মাতার নাফরমানী, খিয়ানত, অশ্লীলতা,
বে- হায়া, হত্যা ও লড়াই, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, ইহুদী নাসারাদের অনুসরণ, ইত্যাদি ফেতনার মূল কারণ ইলমে দ্বীন থেকে দূরে থাকা, যে সমস্ত লােক কোরআন ও হাদীসের শিক্ষা থেকে দূরে থেকে যাচ্ছে, তারা ফেতনা ও পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হচ্ছে। কোরআন ও হাদীস থেকে সাধারণ মুসলমানদের বেপরােয়া পূর্বেও কম ছিল না। অ্যামেরিকায় ঘটে যাওয়া ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা জ্ঞানীদের জন্য যথেষ্ট চিন্তার খােরাক যােগিয়েছে। কোরআন মাজীদের সাথে কাফেরদের দুশমনি স্পষ্ট হয়েছে। কোরআন মাজীদের প্রতি বিদ্ৰোপাত্বক মনভাব কোন অমুসলিমের সৃষ্ট বলে ঠাট্টা করা পূর্ববর্তীলােকদের ঘটনাবলী বলে তমসা করা, (আল্লাহ মাফ করে) তাকে অকার্যকর বলে মনে করা, তার স্থলে আরাে অন্য কোন কিতাব নিয়ে আসা, বা তার আয়াত পরিবর্তন করার জন্য দাবী জানানাে। এসবই রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর যামানায়ই শুরু হয়ে ছিল। তখন থেকে আজ পর্যন্ত কোন না কোন আকৃতিতে কাফেরদের এ নিকৃষ্টতম আন্দোলন চালু আছে।
————-(চলবে)।
তথ্য সূত্র : কিয়ামতের আলামত।
মূলঃ মুহাম্মদ ইকবাল কীলানী।
অনুবাদ ঃ আব্দুল্লাহিল হাদী মু. ইউসুফ।
প্রভাত সংবাদ /র আ