প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : দাজ্জাল অত্যন্ত দ্রুতগতীতে চল্লিশ দিনের মাঝে সারা পৃথিবীতে ঘুরে আসবে। কিন্তু মক্কা ও মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না। আল্লাহ এ উভয় পবিত্র নগরীর রাস্তায় রাস্তায় ফেরেশতা বসিয়ে দিবেন, যারা তা সংরক্ষণ করবে।
এ চল্লিশ দিনও আল্লাহর অসীম ও আশ্চার্য ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হবে, প্রথম দিনটি এক বছরের সমান হবে, দ্বিতীয় দিন হবে এক মাসের সমান, তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান, এর পর অন্যন্য দিন গুলাে স্বাভাবিক থাকবে, এভাবে চল্লিশ দিন বর্তমান হিসাবের আলােকে এক বছর দুইমাস দুই সপ্তাহের সমান হবে। উল্লেখ্য বর্তমানে লুদে ইহুদীদের বড় একটি এয়ারপোর্ট রয়েছে ।
দাজ্জালের সাথে মুসলমানদের কয়েকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে, মুসলমানদের নেতৃত্ব থাকবে ইমাম মাহদীর হাতে, দাজ্জাল পৃথিবী ঘুরে যখন দামেস্কে যাবে, তখন সেখানে পূর্ব থেকেই ইমাম মাহদী উপস্থিত থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকবে। এমতাবস্থায় ফজরের নামাযের পূর্বে দু’জন ফেরেশতার সহযােগীতায় ঈসা (আঃ) দামেস্কের জামে মসজিদের পশ্চিমদিকের মিনারায় অবতরণ করবেন। মুসলমানরা নামাযের জন্য দাঁড়াবে,ইমাম মাহদী ঈসা (আঃ) কে নামায পড়াতে আহ্বান করবে, কিন্তু ঈসা (আঃ) বলবে তুমিই নামায পড়াও। তখন ঈসা (আঃ) ইমাম মাহদীর ইমামতিতে ফজরের নামায আদায় করবে। এসময়ে দাজ্জাল সত্তর হাজার ইহুদী সৈন্য নিয়ে দামেস্ক নগরী অবরােধ করে থাকবে, তখন ইসলামী সৈন্যদের পরিচালনা ঈসা (আঃ) এর হাতে থাকবে, তিনি দাজ্জাল বাহিনীর ওপর আক্রমন করবেন। তুমুল লড়াই হবে, দাজ্জাল পালানাের জন্য চেষ্টা করবে, ঈসা(আঃ)তাকে পিছন থেকে ধাওয়া করবেন এবং ‘লুদ’ নামক স্থানে গ্রেপ্তার করে স্বীয় বর্শা দিয়ে তাকে হত্যা করবেন। দাজ্জালকে হত্যা করার পর ইসলামী বাহিনী ইহুদীদেরকে দেখে দেখে হত্যা করতে থাকবে, পৃথিবীর কোন কিছুই ইহুদীদেরকে আশ্রয় দিবে না। এমনকি কোন ইহুদী যদি রাতের অন্ধকারেও কোন বৃক্ষ বা কোন পাথরের পিছনে আত্তগােপন করে থাকে, তাহলে ঐ পাথর বা বৃক্ষ বলবে যে, হে আল্লাহর বান্দা সে ইহুদী তাকে হত্যা কর। দাজ্জালের হত্যার পর ইহুদী চক্র পরিপূর্ণভাবে খতম হয়ে যাবে, সারা পৃথিবীতে শুধু একটি আদর্শই অবশিষ্ট থাকবে, আর তাহল ইসলাম। সর্বত্র ইসলামের জয়গান চলতে থাকবে, নিরাপত্বা, ভাতৃত্ববােধ, আল্লাহ্ ভিরুতার সয়লাব চলতে থাকবে। ইমাম মাহদীর খেলাফত সাত বছর পর্যন্ত স্থায়ী হবে, ঈসা (আঃ) এর জীবিতাবস্থায় ইমাম মাহদী ইন্তেকাল করবে। ঈসা (আঃ) তার জানাযার নামায পড়িয়ে তাকে দাফন করবে, কিছু দিন পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈসা (আঃ) এর নিকট ওহী আসবে যে, এখন আমি এমন এক মাখলুক পাঠাব যে তাদের মােকাবেলা করার মত ক্ষমতা
কারাে হবে না। অতএব তুমি আমার প্রিয় বান্দাদেরকে নিয়ে তূর পাহাড়ে চলে যাও। ঈসা (আঃ) তখন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে নিয়ে তূর পাহাড়ে চলে যাবেন। অন্যান্য ঈমানদাররা এদিক সেদিক নিজেকে রক্ষা করার জন্য আশ্রয় নিবে। যুলকারনাইনের বাঁধে আটক ইয়াজুজ মাজুজ কাওমকে বের করে দিবেন। তাদের সংখ্যা এত বেশি হবে যে, তাদের প্রথম দলটি ! তুবরা নদীতে পৌছবে (তুবরা সিরিয়ার উপকণ্ঠ যেখান থেকে উর্দুন নদী প্রবাহিত হয়েছে) তখন তারা তার সমস্ত পানি পান করে তা শুকিয়ে দিবে। ইয়াজুজ মাজুজ দুনিয়াতে এত রক্তপাত করবে যে, তারা তাদের স্বীয় শক্তি দিয়ে সমস্ত জমিনবাসীকে খতম করে দিবে এবং বলবে যে, এখন আমরা আকাশ বাসীদেরকে খতম করব। এমনকি তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে, যা আল্লাহর ইচ্ছায় রক্তাক্ত হয়ে ফিরে আসবে। এ দেখে তারা দাবী করবে যে, আমরাতাে এখন আকাশবাসীকেও খতম করে দিয়েছি। তখন প্রচন্ড ভাবে খাদ্য সংকট দেখা দিবে, ঈসা (আঃ) আল্লাহর নিকট দু’য়া করবে যে, হে আল্লাহ্ তুমি ইয়াজুজ মাজুজকে ধ্বংস করে দাও। তখন আল্লাহর নির্দেশে তাদের গর্দানে এমন এক রােগ দেখা দিবে যে, এর ফলে এক রাতে তারা সব শেষ হয়ে যাবে। তাদের ধ্বংস হওয়ার পর, সমস্ত শহর নগরী দুর্গন্ধময় হয়ে যাবে। ঈসা (আঃ) আল্লাহ’র নিকট দ্বিতীয়বার দুয়া করবে যে, হে আল্লাহ্ তুমি আমাদেরকে এ আযাব থেকেও রক্ষা কর। তখন আল্লাহ্ উটের গর্দান সম প্রাণী পাঠাবেন, যারা ইয়াজুজ মাজুজের লাশ উঠিয়ে নিয়ে যাবে, আর দুর্গন্ধ দূর করার জন্য আল্লাহ্ বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যাতে পৃথিবী পরিপূর্ণ রূপে দুর্গন্ধ মুক্ত হয়ে যাবে। ইয়াজুজ মাজুজ খতম হওয়ার পর দুনিয়াতে আরেক বার কল্যাণ ও বরকতের সয়লাভ হবে।
রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ঐ সময়ে একটি আনার দিয়ে সমস্ত লােকের পেট ভরে যাবে, একটি গাভীর দুধ এক বংশের সমস্ত লােকদের জন্য যথেষ্ট হবে, হিংসা বিদ্বেষ সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাবে, ঐ কল্যাণ ও বরকতের সময় ঈসা (আঃ) ইন্তেকাল করবেন। মুসলমানরা তাঁর জানাযার নামায আদায় করবে এবং তাকে রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবরের পাশের খালী জায়গায় দাফন করা হবে। কাহতান বংশের জাহজাহ নামক এক ব্যক্তি তাঁর খলীফা হবে । ঈসা (আঃ) এর মৃত্যুর পর আবার অধপতন শুরু হবে, কিয়ামতের বড় বড় আলামত একের পর এক প্রকাশ পেতে থাকবে, প্রথমত বড় ধরণের দু’টি ভূমিকম্প হবে, একটি হবে পূর্ব দিকে, অপরটি পশ্চিম দিকে, এতে কোন কোন দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে আল্লাহই ভাল জানেন। তবে অসম্ভব নয় যে পূর্বদিকের ভূমিকম্পে জাপান এবং পশ্চিম দিকের ভূমিকম্পে অ্যামেরিকা ধ্বংশ হবে। (এব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন)।
———————–(চলবে)
তথ্য সূত্র : কিয়ামতের আলামত।