প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তার নাফরমান বান্দাদের জন্য জাহান্নামে কি ধরনের কঠোর শাস্তি ব্যবস্থা রেখেছেন সে বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রভাত সংবাদ পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হবে। আজকে জানুন প্রথম পর্ব।

هذه النار التي كنتم بها تكذبون
এ ঐ জাহান্নাম যা তােমরা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করছিলে।
হে দুনিয়া ভরপূর লােকেরা!
আমার কথা একটু মনযােগ দিয়ে শােন। চৌদ্দশত বছর পূর্বের কথা। অদৃশ্য থেকে সংবাদ আনয়ন ও বর্ণনা কারীদের এক ব্যক্তি যে তাঁর স্বীয় এলাকার লােকদের নিকট সত্যবাদী ও বিশ্বাসী উপাধিতে প্রসিদ্ধ ছিল। তিনি এ সংবাদ দিয়েছেন! যে, আমি আগুন দেখেছি। জাহান্নামের আগুনের তাপদাহ, প্রজ্জ্বলন, অগ্নিশিখা, শরীর ও আত্মার সাথে মিশে যাওয়ার আগুন! ঐ আগুন পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ঊনসত্তর গুণ বেশি তাপ সম্পন্ন হবে। আর সেখানে প্রবেশকারীদের জন্য রয়েছে আগুনের পােশাক, আগুনের বিছানা, আগুনের ছাওনী, আগুনের ছাতা, ভারী বেড়ী এবং আগুনের জিঞ্জির, আগুনে উত্তপ্ত ও প্রজ্জ্বলিত কোটি কোটি টন ভারী লােহার হাতুড়ী ও গুর্জ, আগুনে উত্তপ্ত করা আসনসমূহ। আগুনে জন্মগ্রহণকারী উটের সমান বিষাক্ত সাপ । আগুনে জন্মগ্রহণ কারী খচ্চরের সমান বিষাক্ত বিচ্ছু। খাবার হিসেবে থাকবে আগুনে জন্মগ্রহণকারী কাটা বিশিষ্ট যাকুম বৃক্ষ। আর পান করার জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানি, দুর্গন্ধময় বিষাক্ত পুঁজ, হে মানবমন্ডলী! অদৃশ্য থেকে সংবাদ আনয়নকারী, স্বচোখে জাহান্নাম অবলােকনকারী বারংবার আহ্বান করছে, একটু মনযােগ দিয়ে শােন!

انذرتكم النار انذرتكم النار (الدارمی)
অর্থঃ “আমি তােমদেরকে জাহান্নাম থেকে সতর্ক করছি, আমি তােমাদেরকে জাহান্নাম থেকে সর্তক করছি।”

اتقو النار ولو بشق تمرة (بخاری ومسلم)

অর্থঃ “(হে মানব মন্ডলী) এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাক”। (বােখারী ও মুসলিম)
হে বুদ্ধিমান ও চতুর লােকেরা একা একা বা দু’জন বা তার অধিক এক সাথে বসে চিন্তা কর যে, এ সংবাদ আনয়নকারীর সংবাদ সত্য না মিথ্যা। যদি মিথ্যা হয়, তাহলে মিথ্যার পরিণাম সংবাদদাতা ভােগ করবে, তােমাদের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু! এ সংবাদ যদি সত্য হয় তাহলে ?

হে জাহান্নামকে অস্বীকার কারীরা! হে জাহান্নামের সাথে ঠাট্টা বিদ্রুপ কারীরা? হে জাহান্নাম সম্পকে সন্দিহানরা! হে জান্নামের প্রতি ঈমান আনা সত্বেও গাফেল লােকেরা? যখন জাহান্নামের ঐ আগুন চোখের সামনে উত্তপ্ত হতে থাকবে,আর আহ্বান কারী বলতে থাকবেঃ

هذه النار التي تم بها تبون (سورة طور- 14)

অর্থঃ“দেখ এ হল ঐ জাহান্নাম যাকে তােমরা অস্বীকার করতেছিলে”?(সূরা নূর- ১৪)

তাহলে তখন! তােমরা কি জওয়াব দিবে? তােমরা কি পলায়ন করবে? কোথাও আশ্রয় পাবে?
কোন সাহায্যকারীকে ডাকবে? কোন বিপদ দূরকারীকে নিয়ে আসবে?? না ঐ উত্তপ্ত প্রজ্জ্বলিত জাহান্নামে যাওয়াকে মেনে নিবে?

ويل يومئذ للمكذبين (سورة مرسلات – ۱۰)

অর্থঃ“সে দিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরােপকারীদের জন্য।” (সূরা মুরসালাত- ১৫)

بسم الله الرحمن الرحيم الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على رسوله الكريم والعاقبة للمتقين

اما بعد:

জাহান্নাম অত্যন্ত খারপ অবস্থান স্থল, অত্যন্ত খারাপ আবাস,অত্যন্ত খারাপ ঠিকানা। যা আল্লাহ কাফের, মােশরেক, ফাসেক, ফাজেরদের জন্য নির্মাণ করে রেখেছে। আল্লাহ্ কোরআন মাজীদে জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ের ব্যাপারেই বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করছেন। তবে তুলনামুলক ভাবে জাহান্নাম ও তার শাস্তির কথা বেশি বর্ণিত হয়েছে, হয়তবা এর কারণ এও হতে পারে যে অধিকাংশ মানুষ উৎসাহের চাইতে ভয়ের মাধ্যমে বেশি প্রতিক্রিয়শিল হয়। (এব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন)।

জাহান্নাম সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখিত কিছু কিছু বর্ণনা নিন্মরূপঃ ১- জাহান্নাম দেখামাত্রই কাফেরদের চেহারা কাল হয়ে যাবে।
(সূরা ইউনুস- ২৭)
২- জাহান্নামী শাস্থিতে অস্থির হয়ে মৃত্যু কামনা করবে,কিন্তু তাদের মৃত্যু হবে না।
(সূরা ফুরকান-১৩)
৩.জাহান্নামের আগুন জাহান্নামীদের চেহারার গােসত বিদগ্ধ করবে এবং তাদের জিহ্বা বের হয়ে আসবে।
8- অতপর সে সেখানে(জাহান্নামে) মরবেও না বাঁচবেও না।(সূরা আ’লা -১৩)
৫. জাহান্নামের আগুন মানুষের হৃদয়কে গ্রাস করবে।
৭.জাহান্নাম তার অধিবাসীদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে।
৬. জাহান্নামে থাকবে তার অধিবাসীদের আর্তনাদ,ফলে তারা কিছুই শুনতে পাবে না।
(সূরা আম্বীয়া-১০০)
৮- জাহান্নামীদেরকে খাবার হিসেবে দেয়া হবে কাটাদার যাকুম বৃক্ষ এবং দুর্গন্ধময় বৃক্ষের খাদ্য। (সূরা দুখান ৪৩)
৯- জাহান্নামীদের শরীর থেকে নির্গত রক্ত এবং কাশি ও গরম পানি হবে তাদের পানীয় । (সূরা ইবরাহিম- ১৬,১৭)
১০- জাহান্নামীদেরকে আগুনের পােশাক পরানাে হবে।
১১- জাহান্নামীদের হাত ও পা শৃংখলিত করা হবে,আর অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমন্ডল।(সূরা ইবরাহিম -৪৯,৫০)
১২- জাহান্নামীদের জন্য থাকবে আগুনের উড়না ও বিছানা। (সূরা আ’রাফ)
১৩- জাহান্নামীদের জন্য থাকবে আগুনের ছাতি ও আগুনের কার্পেট। (সূরা- সূরা যুমার -১৬)
১৪- জাহান্নামীদের জন্য আগুনের পানীয়। (সূরা কাহাফ- ২৯)
১৫- জাহান্নামীদের গলদেশে থাকবে আগুনের বেড়ি। (সূরা হাক্কা- ৩০)
১৬- জাহান্নামীদের পায়ে থাকবে ভারী বেড়ি (সূরা মুযযাম্মিল ১২)
১৭- জাহান্নামীদেরকে বিষাক্ত গরম হাওয়া ও বিষাক্ত গরম ধুয়া দিয়ে আযাব দেয়া হবে (সূরা ওয়াকিয়া- ৪১,৪৪)
১৮- জাহান্নামীদেরকে উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামে।(সূরা কামার- ৪৮)
১৯- জাহান্নামীদেরকে’সাউদ’নামক আগুনের পাহাড়ে চড়ানাের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে। (সূরা মুদ্দাসসির- ১৭)
২০- জাহান্নামীদরকে লােহার হাতুড়ি ও গুজঁদিয়ে আঘাত করা হবে। (সূরা হাজ্জ – ২১)
নােটঃ উপরে উল্লেখিত আয়াত সমূহে হুবহু আয়াতের তরজমা দেয়া হয়নি, বরং তার ভাবার্থ পেশ করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র : জান্নামের বর্ণনা
প্রভাত সংবাদ /র আ