প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের কাছা কাছি মূহর্তে ফোরাত নদীতে একটি স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশিত হবে, লােকেরা স্বর্ণ হাসিল করার জন্য তার দিকে দৌড়িয়ে আসবে, কিন্তু সাথে সাথে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, তােমরা ঐ দিকে যাবে না। কেননা সেখনে এত তুমুল লড়াই হবে যে, শতকরা ৯৯ জন লােক সেখানে মৃত্যুবরণ করবে। (মুসলিম)
তাঁর বাণী এবং সাথে সাথে আমাদেরকে সর্তক করার উদ্দেশ্য হল, আমাদেরকে পরীক্ষা করা। কে আছে এমন যে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণে স্বর্ণ হাসিল করা থেকে বিরত থাকবে। আর কে আছে যে স্বর্ণ হাসিলের জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নাফরমানী করবে। কিয়ামতের পূর্বে সবচেয়ে বড় ফেতনা অর্থাৎ ঃ দাজ্জালের আগমনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাকে অনেক ক্ষমতা দিবেন। সে বৃষ্টি বর্ষণ করবে, ফসল উৎপন্ন করাবে। মৃতকে জীবিত করবে, এমন কি তার সাথে জান্নাত জাহান্নাম ও থাকবে। অন্য দিকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় উম্মত বর্গকে একথাও বলে দিয়েছেন যে, সে কাফের, তার জান্নাত হবে জাহান্নাম, আর তার জাহান্নাম হবে জান্নাত। তার ধোকায় পড়বে না, আর তাকে স্বীয় রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এর উদ্দেশ্য হল মুসলমানদের ঈমান পরীক্ষা করা, একেই অবস্থা অন্যান্য বর্ণনাবলীরও, মিথ্যার আধিক্য, চক্রান্ত ও ধোঁকাবাজির বিস্থার লাভ, খিয়ানত ও বে- ঈমানী বৃদ্ধি, হারাম উপার্জন বৃদ্ধি, মদ ও ব্যভিচারের বিস্তার, নাচ, গান ও বাদ্য যন্ত্রের আধিক্য, উলঙ্গ পনা ও বে-পর্দার বিস্তার, মিথুক ও দাজ্জালী নেতৃত্বের আধিক্য, পথভ্রষ্ট, নাস্তিক ও,বে-দ্বীন নেতাদের শাসন এবং অন্যান্য ফেতনা থেকে সর্তক করার অর্থ হল যেন লােকেরা এসব কিছুকে
কিয়ামতের ফেতনা হিসেবে দেখে এবং তা থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা করে, উম্মতকে ইয়াজুজ মাজুজের আগমন, ভূমিধস, ধোঁয়া, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় এবং ভূ-পৃষ্ঠের প্রাণীর আগমন সম্পর্কে অবগত করানাে হয়েছে, এজন্য যেন এসমস্ত ঘটনার আগেই লােকেরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে। যখন এ আলামত সমূহ দেখা দিবে তখন কারাে ঈমান আনা তার জন্য কোন উপকারে আসবে না।
মূল কথা হল এই যে, কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে এত বিস্তারিত ভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর উম্মতকে সর্তক করার অর্থ হল এই যে, আমরা এ ফেতনার মূহর্তে আমাদের দ্বীন ও ঈমানকে রক্ষার জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা করি। আর বিধিবদ্ধ কথা হল এই যে, পরবর্তী যুগসমূহ বড় বড় ফেতনায় ভরপুর, গভীর অন্ধকারে মুষলধারায় বৃষ্টির ন্যায় মুসলমান জাতির প্রতি ফেতনা আসতেছে, অতএব হে ঈমনদারগণ! ফেতনার সময় আল্লাহকে ভয় করতে থাক, স্বীয় অনুগ্রহকারী, স্বীয় নেতা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পদাংক অনুসরণ করতে থাক। সর্বাবস্থায় ঈমানের ওপর অটল থাক,এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার চাক চিক্যের মােহে পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে মেনে নিবে না । আল্লাহ্ আমাদের সকলের সহায় হােন। আমীন।
কতিপয় যুদ্ধ!
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় উম্মতকে যেমন ফেতনা থেকে সর্তক করেছেন তেমনিভাবে কিছু কিছু যুদ্ধ থেকেও সর্তক করেছেন। এটাতাে স্পষ্ট কথা যে উম্মতে মােহাম্মদীর প্রথম যুদ্ধ মােহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নেতৃত্বে, মক্কার মােশরেকদের বিরুদ্ধে বদর প্রান্তে সংগঠিত হয়ে ছিল । আর সর্বশেষ যুদ্ধ হবে ঈসা (আঃ) এর নেতৃত্বে, ইহুদীদের বিরােদ্ধে ফিলিস্তিনে। বদর থেকে নিয়ে দাজ্জালের সাথে সংগঠিত যুদ্ধ পর্যন্ত চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় সম্পর্কে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে অবগত করিয়েছেন। যা আমরা এখানে বিস্তারিত বর্ণনা করব। রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তােমরা আরব উপদ্বীপে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ তােমাদের হাতে তা বিজয় করবেন। এর পর তােমরা পারশ্যবাসীদের সাথে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ্ ওখানেও তােমাদেরকে বিজয়ী করবেন । এর পর তােমরা রােমবাসীদের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ ওখানেও তােমাদেরকে বিজয়ী করবেন। এর পর তােমরা দাজ্জালের বিরােদ্ধে যুদ্ধ করবে আল্লাহ ওখানেও তােমাদেরকে বিজয়ী করবেন। (মুসলিম)
এ হাদীসে পর্যায় ক্রমে চারটি বিজয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
১- আর উপদ্বীপ বিজয়ঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে বিভিন্ন যুদ্ধের পর আরব উপদ্বীপ বিজয় হয়েছে, এর মাধ্যমে তাঁর এ বাণী তাঁর জিবীত অবস্থায়ই বাস্তবায়িত হয়েছে। উল্লেখ্য আরব উপদ্বীপের বিজিত এলাকা সমূহ ছিল নিন্মরূপঃ মক্কা, মদীনা, জিদ্দা, তায়েফ, হুনাইন, রাবেগ,ইয়ানবু, খাইবার, মাদায়েন সালেহ, তাবুক , দাওমাতুল জান্দাল, আইলা, ইয়ামামা, বাহরাইন(আহসা) ওমনি,হারামাউত, সান, হামীরা, নাজরান, আরব উপদ্বীপ ইসলাম আগমনের পূর্বে পারশ্য সম্রাজ্যের অংশ ছিল। যদিও আরব উপদ্বীপ বিভিন্ন যুদ্ধের ফলে বিজয় হয়েছে, কিন্তু হাদীসে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সংক্ষিপ্তভাবে শুধু আরব উপদ্বীপের বিজয়ের কথাই উল্লেখ করেছেন।
২ – পারশ্য বিজয় ঃ ওমর ফারুক (রাযিয়াল্লাহু আনহুর যুগে, বিভিন্ন যুদ্ধের পর পারশ্যও বিজয় হয়েছিল, অতএব রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর এ বাণীটিও সাহাবাগণের যুগে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে । উল্লেখ্য রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আগমনের পূর্বে রূম ও পারশ্য পৃথিবীর দু’টি বৃহৎ শক্তির অধিকারী রাষ্ট্র ছিল, পারশ্যবাসীদের মাযহাব ছিল অগ্নি পূজা, তাদেরকে মাজুসী (অগ্নিপূজক) বলা হত । ইসলামের পূর্বে পারশ্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এলাকা সমূহের মধ্যে ছিল, ইয়ামান, হিরা, হামদান, কিরমান, রাই, কাযীন, বােখারা, বাসরা, কাদেসিয়া, ইস্পাহান, খোরাসান (বর্তমানে আফগানিস্থান)তিবরিয, আজারবাইজান, তুরকেমেনিস্তান, সামারকান্দ, বােখারা, তারমু, এবং মধ্য এসিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহও পারশ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল । পারশ্যের বাদশা কিসরা সম্পর্কে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কিসরা। ধ্বংস হলে এর পর আর কোন কিসরা হবে না। (মুসলিম)
এর অর্থ হল এক বার যদি কিসরার রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে দ্বিতীয়বার অগ্নি পূজকদের আর সেরকম রাষ্ট্র হবে না। আর না কাউকে কিসরা বলা হবে। মূলত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা বলেছিলেন তাই হয়েছে।
——————-(চলবে)
তথ্য সূত্র : কিয়ামতের আলামত।
প্রভাত সংবাদ /র আ