মুহাম্মাদ আব্দুল আউয়াল।। সেই ২০০৩ সালে শুধু পেটের ধান্ধায় গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা। আসার সময় একটা জাপানী ইঞ্জিন সাথে করে নিয়ে আসি। তখন পাথর খেলেও হজম হয়ে যেত। এই কয় বছরে ঢাকা শহরে ফরমালিন আর কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার খেতে খেতে ইঞ্জিনটা চায়না হয়ে গেছে। এখন খাবারে একটু এদিকসেদিক হলেই সর্বনাশ! ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যায়!
আসলে কি খাচ্ছি আমরা? কিবা পাচ্ছি এই শহরে? গ্রামে তাও কিছু জিনিস তাজা টাটকা পাওয়া যায় এখনো।
এই শহরে চাল খাবেন! সেখানেও নিরাপত্তা নেই! মিনিকেট নামের চাল খেয়ে আমরা নিজেদেরকে প্রতিদিন মিনি মিনি কাট দিচ্ছি! চুল ছাঁটের মত সুস্বাস্থ্যকে ছাঁট দিচ্ছি!
মাছ খাবেন! ফরমালিনের ভয়! ফ্রিজে রাখা, বরফ দেয়া মাছ খেয়ে কোন স্বাদ পাওয়া যায় না। অথচ বলা হয়ে থাকে মাছে ভাতে বাঙ্গালী!
এই দেশকে বলা হয় নদী মাতৃক বাংলাদেশ”! পানি আর পানি! অথচ এই দেশে, এই ঢাকা শহরে এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা বাহাদুর সরকারগুলো দিতে পারেননি আজও। এখানে মিথ্যা আশ্বাসে, ফাঁকা বিশ্বাসে এক গ্লাস পানি ০১ (এক) টাকা দিয়ে কিনে খেতে হয়! এসব পানি বাথরুম থেকে এনে আমাদেরকে খাওয়ায় আর আমরা ঘাম ঝড়ানো গাঁটের পয়সায় কিনে খেয়ে বিকল হওয়া ইঞ্জিনটাকে আরেকটু বিকল হতে সহযোগিতা করি!
বোতলে ভরা সুপেয় পানির উদাহরণ দিয়ে আপনি আমি সান্ত্বনা পেতেই পারি। কিন্তু সেওতো বহুত দাম! ৬০০ গ্রাম পানির দাম কমছে কম ১৫/- টাকা। ৬০০ গ্রাম পানিতে কয় গ্লাস হবে বলতে পারেন? হিসাব করে দেখুন প্রতি গ্লাস পানির দাম কত?
আমি নিশ্চিত কোন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট নিয়োগ দিলেও এই হিসাব মিলাতে পারবেন না! কারণ, এই বোতলে ভরে যারা পানি বিক্রির ব্যবসা করেন তারা এই বেহিসাবি টাকাটা পাচার করে কানাডার বেগম পাড়ায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের গড়ে তুলছেন, সে হিসাবটা মিলে গেছে খাতায় কলমে বহুত আগেই!
আমরা হত ভাগারা এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানির আশায় সকাল থেকেই যুদ্ধ শুরু করি। গ্যাসের চুলায় পানি সিদ্ধ করি! গরম করা পানি সুস্বাদু না হলেও ইঞ্জিনের জন্য আরামদায়ক।
এখানেও বেগম পাড়ার স্বপ্নবিলাসীদের হামলা! পানি কেন সিদ্ধ করে খেতে হবে? তো কি করতে হবে এখন! গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। এখন নিচ্ছে ৯৭৫/- টাকা। শুনেছি প্রস্তাব করা হয়েছে ২,০০০/- টাকার উপরে! আমাদের কোন ভালোতেই তাদের সহ্য হচ্ছে না!
শিশু খাদ্যগুলো দেখেন। একটা চকলেট বাচ্চাকে খাওয়ানোর মতো আছে? নেই। বাংলাদেশে যেসকল চকলেট, জুস, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি ইত্যাদি পাওয়া যায় তাতে কি আসলেই শিশুদের স্বাস্থ্য সহায়ক কোন উপাদান আছে? একেবারে অন্ধবিশ্বাসে আমরা বাচ্চা হাতে তুলে দিচ্ছি। নিজের বাচ্চাকে নিজেই ধ্বংস করে দিচ্ছি।
কথায় বলে- বাঙ্গালী ব্যবসার আগে চুরি শিখে। কথাটা সত্যি ভাই। হিসাব মিলিয়ে দেখবেন।
* বাজারে মাঠা পাওয়া যায়। দেখা গেল মাঠা তৈরী করে টয়লেট টিস্যু দিয়ে!
* শীতের সময়ে পিঠা পায়েস খাবেন খেজুরের গুড় দিয়ে। বাজারে নানা রকম গুড়ের ছড়াছড়ি। দেখা গেল গুড় বানায় গরুর চর্বি, থার্ড ক্লাস আটা দিয়ে!
* আপনি কাসুন্দি খাবেন। খেতে থাকেন। আরে ভাই কাসুন্দি বানায় গরুর খাবার খৈল দিয়ে!
* আপনার ঘরের পাশের দোকানে পরোটা বানায়। গিয়ে খাবেন। দেখবেন ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে! অথচ ঐ একই পরোটা আপনার ঘরে বানিয়ে খাবেন ইঞ্জিন সারাদিন আরামে আপনাকে সার্ভিস দিচ্ছে।
কেনরে দোকানি ভাই ময়দার খামিরা করতে আর কিছু সবজি কেটে ভাজি রান্না করতে তোমার মেকানিজম করতে হবে কেন?
আসলে হয়েছি কি ভাই বাংলাদেশে প্রকৃত বিজ্ঞানীরা বসবাস করে। তারা সারাক্ষণ গবেষণায় রত থাকে! তা নাহলে বিশ্বের কোন দেশের বিজ্ঞানীদের মাথায় খাদ্যে ভেজাল দেয়ার চিন্তা না আসলেও আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা এই ক্ষেত্রে সফল।
আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা শিক্ষিত না হলেও তারা প্রচন্ড মেধাবী! এই ধরুন একজন চাষা। বিকেল বেলা খেত থেকে তরতাজা কাঁচা-পাকা টমেটো তুলে এনে ঘরে রেখে কি যেন স্প্রে করে দিবে। দেখা গেল সকাল হতেই টমেটো পেকে টুকটুকে লাল হয়ে বৌ সাজে সেজে বাজারে চলে যাচ্ছে!
এটা কি যেনতেন মেধাবীদের কাজ! এই করতে করতে আমরা সহজ সরল পথে চলতে ভুলে গেছি। বদলে ফেলেছি জীবনের গতিপথ। টাকার পিছনে দৌড়াচ্ছি অন্ধের মতো। কোনটা হালাল, কোনটা হারাম বুঝতেই পারছি না।
#ছবি
আজকে আমরা অফিসে দই পার্টি করেছি। সকলে আনন্দ করে দই খেয়েছি। আসলেই কি দই খেয়েছি? প্রতি কাপ দইয়ে কি পরিমাণ দুধ আছে, কি পরিমাণ ভেজাল আছে আমরা কেউ জানি না। বেঁচে আছি অন্ধ বিশ্বাসে। আমরা বুঝতে পারছি না যে, বেঁচে থাকার জন্য খাওয়া, না খাওয়ার জন্যই বেঁচে থাকা!
সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এই প্রত্যাশা করছি।
বিনীত,
মুহাম্মাদ আব্দুল আউয়াল
০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ইং
প্রভাত সংবাদ /আ আ