প্রভাত সংবাদ ধর্ম ডেস্ক : আরবি অষ্টম মাসের নাম শাবান মাস। এ মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে বলা হয়ে থাকে পবিত্র ‘শবেবরাত’ । শবেবরাত শব্দটি ফার্সি ভাষা হতে উৎপত্তি। ‘শব’অর্থ- রাত বা রজনী আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ-ভাগ্য। অর্থাৎ শবেবরাত শব্দের অর্থ- ভাগ্যরজনী।
হাদিস মতে একে আরবিতে বলা হয় ‘লাইলাতুল বরাত’। এই রাতে আল্লাহ্তালা তার রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। যারা খালেস দিলে তওবা করে নিজ গুনাহের জন্য আল্লাহ’র নিকট ক্ষমা চাইবে আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করে দেন।
শবেবরাতের রাত্রটি মুসলিম উম্মাহের নিকট অতি গুরুত্বপূর্ণ রজনি বিধায় মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে তা উদযাপন করে থাকে। এই রাতের ইবাদত বন্দেগি মহান আল্লাহ্’র নিকট খুবই পছন্দনিয়।
শবেবরাত রাত্রটি বিশেষ ফজিলতময় হওয়ায় ধর্ম প্রান মুসলমানগন নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ্র ইবাদতে মসগুল হন। নফল নামাজ কোরান তেলাওয়াত, তাসবিহ পাঠ, জিকির, আজকার, তওবা, ইস্তেগফার করে নিজেদের পাপ পক্ষিলতা থেকে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারত করেন এবং সকল মুমিন মুসলমানদের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ; সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করাও মোস্তাহাব। ইবাদতের জন্য দিন অপেক্ষা রাত শ্রেয়তর। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো; কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন; কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিকপ্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করব। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৪)।
মধ্য শাবানের নফল রোজা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করো ও দিনে রোজা পালন করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ)। এ ছাড়া প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিজ-এর নফল রোজা তো রয়েছেই। যা আদি পিতা হজরত আদম (আ.) পালন করেছিলেন এবং আমাদের প্রিয় নবী (সা.)–ও পালন করতেন; যা মূলত সুন্নত। সুতরাং তিনটি রোজা রাখলেও শবে বরাতের রোজা এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ফকিহ হাফিজ ইবনে রজব (রা.) বলেন, এদিনের রোজা আইয়ামে বিজ, অর্থাৎ চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজার অন্তর্ভুক্ত। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ১৫১)।
এ ছাড়া মাসের প্রথম তারিখ, মধ্য তারিখ ও শেষ তারিখ নফল রোজা গুরুত্বপূর্ণ; শবে কদরের রোজা এর আওতায়ও পড়ে। সওমে দাউদি বা হজরত দাউদ (আ.)-এর পদ্ধতিতে এক দিন পর এক দিন রোজা পালন করলেও সর্বোপরি প্রতিটি বিজোড় তারিখ রোজা হয়; এবং শবে কদরের রোজা এর শামিল হয়ে যায়। সর্বোপরি রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের পর রজব ও শাবান মাসে বেশি নফল নামাজ ও নফল রোজা পালন করতেন; শাবান মাসে কখনো ১০টি, কখনো ১৫টি, কখনো ২০টি নফল রোজা, কখনো আরও বেশি রাখতেন। এমনকি উম্মুহাতুল মোমেনিন বা মোমিন মাতাগণ বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে নফল রোজা রাখা শুরু করতেন মনে হতো তিনি আর কখনো রোজা ছাড়বেন না। (মুসলিম)।
শবে বরাতের সঙ্গে হালুয়া-রুটির একটি প্রচলন পরিলক্ষিত হয়। হালুয়া আরবি শব্দ, অর্থ হলো মিষ্টি বা মিষ্টান্ন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টি পছন্দ করতেন, এ কথা সুবিদিত; তিনি গোশত পছন্দ করতেন, তা-ও অবিদিত নয়। যা-ই হোক শবে বরাত হলো ইবাদতের রাত, দান-খয়রাত করা ও মানুষকে খাওয়ানো একপ্রকার ইবাদত; তবে এই দিন ও রাতকে হালুয়া-রুটিতে পরিণত করে ইবাদত থেকে গাফেল হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তেমনি হালুয়া-রুটির ওপর ফতোয়া প্রদানও প্রজ্ঞাপ্রসূত নয়।
শবেবরাতের নামে আতশবাজী, ফটকাবাজী, ঘর আলোক সজ্জা করা, আগর বাতি ও মোমবাতি এসব জালানো থেকে বিরত থাকা উচিত।
পবিত্র বরাত রজনীতে নিম্ন লিখিত আমল করা গুলো যেতে পারে:
১। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে অর্থাৎ বরাতের রজনীতে মাগরিবের নামাযের পর দুই রাকাত নফল নামায আদায় করবেন। প্রত্যেক
রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একবার সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (পারা-২৮, আয়াত নং-২২,২৩,২৪) ও একবার সূরা ইখলাস পড়িবেন।
* ফযিলত : এই নামায আদায় করলে বিগত জীবনের শুনাহসমূহ আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেন।
২। বরাতের রজনীতে এশার নামাযের আগে দুই রাকাত করে মােট আট রাকাত নামায আদায় করবেন। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর
পাঁচবার করে সূরা ইখলাস পড়িবেন।
• ফযিলত : গুনাহ মাফের জন্য এই নামাযও বড় গুরুত্বপূর্ণ।
৩। বরাতের রজনীতে এশার নামায শেষে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করবেন। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একবার আয়াতুল কুরসি ও পনেরবার(১৫) সূরা ইখলাস পড়িবেন। নামায শেষে একশত বার দরূদ শরীফ পড়ে রিযিক বৃদ্ধির জন্য দুআ করিবেন।
• ফযিলত : এই নামাযের বরকতে রিযিকে তারাক্ষি হবে ইনশা আল্লাহ।
৪। বরাতের রজনীতে এশার নামায শেষে দুই রাকাত করে মােট আট রাকাত নামায আদায় করবেন। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একবার সূরা কদর ও পঁচিশবার(২৫) সূরা ইখলাস পাঠ করবেন।
• ফযিলত : গুনাহ মাফের জন্য এই নামাযও গুরুত্বপূর্ণ। এই নামায আদায়কারিকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন ইনশা আল্লাহ।
৫। বরাতের রজনীতে গভীর রাতে চার রাকাত করে আট রাকাত নামায আদায় করবেন। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর দশবার করে সূরা
ইখলাস পাঠ করবেন।
• ফযিলত : এই নামায আদায়কারির জন্য আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য ফেরেশতা মুকাররার করিবেন। যারা তাঁকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত
লাভের সুসংবাদ দিবেন।
৬। বরাত রজনীতে এশার নামাযের পর দুই রাকাত করে মােট চৌদ্দ(১৪) রাকাত নামায আদায় করবেন। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর
একবার সূরা কাফেরুন, একবার সূরা ইখলাস, একবার সূরা ফালাক ও একবার সূরা নাস পড়বেন। নামায শেষে একবার আয়াতুল কুরসি (৩য়-পারা, আয়াত নং-২৫৫) ও একবার সূরা তাওবা(পারা-১১, আয়াত নং-১২৮ ও ১২৯)’র শেষ আয়াত ‘লাকাদ যাআকুম রসূলুমমিন আনফুসিকুম
আযীয….. পড়বেন।
• ফযিলত : এই নামাযের উছিলায় দ্বীন ও দুনিয়াবি সকল নেক ও জাযেয় উদ্দেশ্য সফল হবে ইনশা আল্লাহ।
৭। বরাত রজনীতে মাগরিবের নামায শেষে ৭টি কুল (বড়ুই) পাতা পানিতে সেদ্ধ করে ঐ পানি দ্বারা গােসল করিলে সারা বছর যাদু-টোনা ইত্যাদি
অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকবে ইনশা আল্লাহ।
৮। বরাত রজনীতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তথা ৩য় পারার ২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত একুশবার(২১) তিলাওয়াত করলে আল্লাহর রহমতে নিরাপত্তা, শান্তি ও জান-মালের হেফাযত হবে ইনশা আল্লাহ।
৯। শাবান মাসের ১৫ তারিখ যােহরের নামাযের পর দুই রাকাত করে মােট চার রাকাত নামায আদায় করবেন। ১ম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর
একবার সূরা যিলযাল ও দশবার সূরা ইখলাস, ২য় রাকাতে সূরা ফাতেহার পর একবার সূরা তাকাছুর ও দশবার সূরা ইখলাস, ৩য় রাকাতে সূরা
ফাতেহার পর তিনবার সূরা কাফিরূন ও দশবার সূরা ইখলাস, ৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতেহার পর তিনবার আয়াতুল কুরসি ও পঁচিশবার(২৫) সূরা
ইখলাস পড়বেন।
• ফযিলত : এই নামায আদায়কারিকে আল্লাহ তায়ালা দ্বীন-দুনিয়ার মঙ্গল ও কল্যাণ এবং হাশর দিবসে খাস নজয়েও করম দান করিবেন
ইনশাআল্লাহ।
১০। বরাত রজনীর দিনে রােযা রাখবেন। এই নফল রােযার অনেক ফযিলত রয়েছে আর এই রােযার ব্যাপারে প্রিয় নবীজি(দ.) এর নির্দেশও রয়েছে।
# প্রভাত সংবাদ /