শরীরকে বিকট আকৃতি দেয়ার মাধ্যমে শাস্তি :
বর্তমান শরীর নিয়ে যেহেতু জাহান্নামের আযাব সহ্য করা অসম্ভব তাই জাহান্নামীদের শরীরকে অধিক পরিমাণে বড় করা হবে, যা নিজেই একটি শাস্তি হয়ে যাবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন :“জাহান্নামে কাফেরের একটি দাঁত উহুদ পাহাড় সম হবে”। (মুসলিম)
কোন কোন কাফেরের চামড়া তিন দিনের রাস্তার দূরত্বের ন্যায় মোটা হবে। (মুসলিম) কোন কোনটি ৪২ হাত (৬৩ ফিট) মোটা হবে। (তিরমিযী)
এ পার্থক্য কাফেরের আমলের পার্থক্যের কারণে হবে। কোন কোন কাফেরের দু’কাধেঁর মাঝের দূরত্ব হবে দ্রুত গতি সম্পন্ন কোন অশ্বের তিন দিন পথ
চলার দূরত্বের সমান । (মুসলিম)
কোন কোন কাফেরের শুধু কান ও কাধেঁর মাঝের দূরত্ব হবে ৭০ বছর চলার দূরত্ব। কোন কোন
কাফেরের বসার স্থান মক্কা ও মদীনার দূরত্বের সমান হবে। (৪১০ কিঃ মিঃ) । (তিরমিযী)
কোন কোন কাফেরের শরীর এত বড় হবে যে তা জাহান্নামের একটি কোণে পরিণত হবে। (ইবনেমাযা)
কোন কোন কাফেরের বাহু ও রান পাহাড় সম হবে। (আহমদ)
এ পৃথিবীতে আল্লাহ্ কোন পার্থক্যহীন ভাবে সমস্ত মানুষকে অত্যন্ত সুন্দর আকৃতি,ও মানানসয়ী
শরীর দান করেছেন। যদি ঐ মানানসয়ী শরীরের কোন একটি অঙ্গ বে- মানান হয়,তা হলে মানুষের আকৃতি অত্যন্ত কুৎসিত ও হাস্যকর হয়ে যায়। চিন্তা করুন ৫বা ৬ ফিট শরীরের সাথে ১০ফিট লম্বা বাহু যদি সংযুক্ত হয় বা কপালের ওপর ১ ফিট লম্বা নাক সংযোগ করা হলে,মানুষের আকৃতি কি পরিমাণ কুৎসিত হতে পারে। বরং তা হবে অত্যন্ত ভয়ানক। সম্ভবত জাহান্নামে কাফেরের শরীরকে,এ বে- মানান আকৃতিতে বৃদ্ধি করে,অত্যাধিক ভীতিকর ও আতংক ময় করা হবে। (আল্লাহ ই এ ব্যাপারে ভাল জানেন)
মানব শরীরে কষ্টের দিক থেকে তার চামড়া সার্বাধিক অনুভূতি পরায়ণ। আর একারণেই
কাফেরকে জাহান্নামে অধিক শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে, জলন্ত চামড়াকে পরিবর্তনের কথা কোরআ’নে
বার বার বিশেষ ভাবে এসেছে। (সূরা নিসা ৪ নং আয়াত দ্রঃ।)
চামড়াকে যখন টানা হয়,তখন কেমন ব্যাথা হয়। তার অনুমান এভাবে করা যায় যে,বাহু বা পায়ের ভাঙ্গা হাড্ডি কে জোড়া দেয়ার জন্য,চামড়াকে যদি সামান্য পরিমাণে টানা হয়, তাহলে এর ব্যাথায় মানুষ ছট ফট করতে শুরু করে দেয়। ঐ চামড়াকে টেনে যখন এত লম্বা করা হবে,যার বর্ণনা হাদীসে এসেছে, তাতে কাফেরের কত মারাত্বক কষ্ট হবে। সম্ভবত দুনিয়াতে তার কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
এত বিশাল দেহের অধিকারী কাফেরকে যখন বড় বড় সাপ ও বিচ্ছু বার বার ধংশন করতে থাকবে, এবং তার গোসত খেতে থাকবে, তখন তার বিষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় বে- হুশ,ফুলা,রক্ত রঞ্জিত এবং হাঁপানো ও কম্পমান কাফেরের ভয়ানক দৃশ্যের কল্পনা করুন ! মানুষকে তার শরীর নিয়ে নড়াচড়া করার ক্ষমতাও একটি নিদৃষ্ট পরিমাপের মধ্যে। এ শরীর যদি অস্বাভাবিক ভাবে মোটা হয়ে যায়, তাহলে মানুষের জন্য উঠা বসা ও চলা ফিরা করা এত কঠিন হয়ে যায়,যেন জীবনটা একটা আযাব। আর মোটা হওয়ার কারণে শরীরে আরো বহু প্রকার সমস্যা দেখা দেয়। যেমন মন রোগ, শ্বাস কষ্ট,চোখের সমস্যা,জাহান্নামে কাফেরের শরীর বড়
হওয়ার কারণে অন্যান্য সমস্যাও আযাব আকারে দেখা দিবে, কি দিবে না এটা তো আল্লাহ্ ই ভাল জানেন। কিন্তু একথা স্পষ্ট যে, ফেরেশ্তা গুর্জ ও হাতুড়ি দিয়ে তাকে মারবে বা সাপ ও বিচ্ছু ছোবল মারতে থাকবে। ফলে কাফের হরকতও করতে পারবে না। আর যদি কখনো তাকে জোর করে এক স্থান থেকে, অন্য স্থানে স্থানান্তর করতে চায়, তাহলে কাফেরের জন্য এক এক কদম উঠানো এত কঠিন হবে যে, এটাই একটি বেদনা দায়ক শাস্তিতে পরিণত হবে। কাফের জাহান্নামে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলবেঃ হে আল্লাহ্ !এক বার এখান থেকে বের কর,পরে আমরা নেককার হয়ে এখানে আসব। উত্তরে বলা হবে
فذوقوا فما للظالمين من نصير (سورة فاطر 37)
অর্থঃ “সুতরাং শাস্তি আস্বাদন কর; যালিমদের কোন সাহায্য কারী নেই”। (সূরা ফাতির – ৩৭)
আল্লাহ্ স্বীয় রহমত,দয়া, অনুগ্রহে আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। নিঃসন্দেহে তিনি
অত্যন্ত উদার ভাবে নে’মত দানকারী বাদশা, অনুগ্রহ পরায়ণ, অত্যন্ত করুণাময় ও দয়ালু ।
—————চলবে।
তথ্য সূত্র : জাহান্নামের বর্ণনা।
#প্রভাত সংবাদ /র আ/৩৩