শিশির সমরাট ।। কুমিল্লায় পালিত হয়েছে হিন্দুধর্মাম্বলীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্ৰী শ্ৰী জগন্নাথ-বলদেব- সুভদ্রাদেবীর রথযাত্রা মহোৎসব।
কুমিল্লা শহরতলীর আদর্শ সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খামার কৃষ্ণপুর গ্রামে অবস্থিত জগন্নাথ দেবের মন্দির হতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) কুমিল্লা শাখার আয়োজনে গতকাল (শুক্রবার) বেলা ৩ টায় ভক্তসমাবেশ ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, পৃথক রথারোহণ, শুভ আরতি ও মহাহরিনাম কীর্তন সহযোগে বর্ণাঢ্য শুভ রথযাত্রা জগন্নাথ পুর থেকে পাথুরিয়া পাড়া গুন্ডিচা মন্দিরে না থেমে এবারই প্রথম জগন্নাথপুর থেকে সালাউদ্দিন হয়ে ঠাকুরপাড়া কালিতলা মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।
রথযাত্রা কালে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে ।
রথযাত্রার উদ্বোধন করেন কুমিল্লার চান্দিনা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. প্রাণগোপাল দত্ত। প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আরফানুল হক রিফাত।
রথ শোভাযাত্রা শেষে কালিতলা মন্দিরে পৌছানোর পর আরতি ও ভজন কীর্তন পরিবেশন করা হয়।
হিন্দুধর্মাম্বলীদের মতে,পাঁচ হাজার বছর আগে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকা থেকে গিয়েছিলেন কুরুক্ষেত্রে। শুনে সঙ্গেসঙ্গে ব্রজবাসীরাও ছুটলেন কৃষ্ণকে দর্শন করতে। কৃষ্ণ তখন রথে উঠে বলেছেন, তিনি কুরুক্ষেত্র থেকে তার রাজধানী দ্বারকায় ফিরে যাবেন।
গোপবেশের পরিবর্তে রাজবেশ। হাতে বাঁশির পরিবর্তে ধনুর্বাণ। কোমরে তলোয়ার/বর্ম, মাথায় মুকুট। কৃষ্ণকে এভাবে দেখে গোপাদের মন ভরল না। বিশেষ করে শ্রীমতি রাধারাণী বললেন, এই কৃষ্ণ আমাদের সেই কৃষ্ণ নয়।তাকে আমরা চিনতাম, বৃন্দাবনের বনে বনে আমাদের সঙ্গে সে লীলা খেলা করত। সেই কৃষ্ণের মাথায় ময়ূরের পাখা, তার পরণে পীত বসন, গলায় বনমালা, হাতে বাঁশি আর এই কৃষ্ণের পরণে তো রাজবেশ। রাধারাণীর সেই মনোভাব বুঝতে পেরে বাজবাসীরা কৃষ্ণের রথের দড়ি ধরে। কৃষ্ণের রথের ঘোড়াগুলো ধরে টানতে টানতে নিয়ে চললেন বৃন্দাবনের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে বলরাম, তিনিও ব্রজবাসীদের শৈশবের, কৈশোরের সাথী। তাকেও রথে চড়ালেন। সুভদ্রা বোন, তাকেও তারা নিয়ে চললেন।
জগন্নাথপুরীর এই রথযাত্রাটি হচ্ছে গোপাদের সেই কুরুক্ষেত্র রথযাত্রার দ্যোতিক। রথের সময় জগন্নাথ বা কৃষ্ণকে নিয়ে যাওয়া হয় নীলাচল থেকে সুন্দরাচলে। যেখানে কৃষ্ণ ব্রজবাসীদের সঙ্গে আট দিন ছিলেন। তাই গুন্ডিচা মন্দিরেও শ্রী শ্রী জগন্নাথদেব ৮ দিন অবস্থান করেন। নীলাচলে ভাব হচ্ছে ঐশ্বর্য্যভাব, আর সুন্দরাচল হচ্ছে মাধর্য্যভাব।
এ কারনে কুমিল্লাতে পুরীধামের ন্যায় পৃথক গুন্ডিচা মন্দির বিদ্যামান এবং শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের গুন্ডিচা মন্দিরে অবস্থান উপলক্ষ্যে প্রতিদিন হাজারো ভক্তবৃন্দের মহাপ্রসাদ ও মনোরম সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয় বলে জানিয়েছেন ইসকন কুমিল্লা শাখার সাধারন সম্পাদক পীতাম্বর গৌরাঙ্গ দাস।