নেকবর হোসেন ও শিশির সমরাট ।। কুমিল্লা লাকসাম উপজেলার শ্রীয়াং এলাকায় ২০০৭ সালের ৭ জানুয়ারি রাতে গলা কেটে দুই ভাইসহ তিন জন ব্যবসায়ী হত্যাকান্ডের মূল আসামী মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত মোঃ রাসেলকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ১১ এর ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি ২ এর একটি দল।
রোববার (২৮ আগস্ট) রাতে কুমিল্লার সদর উপজেলার আলখারচর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব’র কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন সোমবার
( ২৮ আগস্ট) দুপুরে র্যাব কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং-এ এই সব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ২০০৭ সালে একরাতে শ্রীয়াং বাজার থেকে ব্যবসা শেষে কাঁচামাল ও পান ব্যবসায়ি দেবনাথের ছেলে উত্তম দেবনাথ ও পরীক্ষিত দেবনাথ এবং অপর পান ব্যবসায়ী সামছুল হকের ছেলে বাচ্চু মিয়া বাড়ি ফেরার পথে দন্ড প্রাপ্ত আসামি রাসেল ও তার সহযোগীরা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ভিকটিমরা তাদের সাথে থাকা টাকা-পয়সা বাধ্য হয়ে আসামীদের দিয়ে দেয়।
হঠাৎ ভিকটিম উত্তম দেবনাথ আসামী রাসেল ও তার সহযোগীদের চিনতে পেরেছে এবং পরেরদিন স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানের নিকট তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে মর্মে চিৎকার করে উঠে।
যেহেতু ভিকটিমরা আসামীদের চিনে ফেলেছে তাই আসামী রাসেল ও তার সহযোগীরা ভিকটিমদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে আসামীরা ভিকটিমদেরকে পার্শ্ববর্তী একটি মাঠে নিয়ে চাপাতি ও ছোরা দিয়ে গলা কেটে নিমর্মভাবে হত্যা করে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, ঘটনার পরেরদিন সকালে রাসেল ও তার পরিবার কুমিল্লা জেলা ত্যাগ করে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন ডগরমুরা এলাকায় তার পিতার এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তীতে স্ব-পরিবারে সেখানে ভাড়াবাসায় বসবাস শুরু করে। নিজের আসল পরিচয় গোপন রাখার জন্য আসামী রাসেল
ডগরমুরা এলাকায় পরিচিতি লাভ করে সবুজ নামে। এই এলাকায় তিন থেকে চার বছর অর্থাৎ ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত হকার ব্যবসা করে খুব নিরাপত্তার সাথে বসবাস করে আসছিল। ২০১০ সালের শেষের দিকে তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের একটি পরিবারের ডগরমুরা এলাকায় যাতায়াত পরিলক্ষিত হলে তারা সাভার নবীনগর থানাধীন নিরিবিলি এলাকায় নতুন বাসা ভাড়া নেয়। সেখানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে অধিক অর্থউপার্জনের জন্য হকারী ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে সড়কে পলাশ ও নিরাপদ পরিবহণে হেল্পারের কাজ করা শুরু করে। ২০১৬ সালে তার
স্ত্রী তার আসল পরিচয় ও মামলার বিষয়টি জানতে পেরে তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে। তাই ভয়ে আসামী রাসেল সাভার এলাকা ত্যাগ করে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর তার পরিবার সাভার এলাকা ত্যাগ করে কুমিল্লা জেলার বরুড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। বরুড়া এলাকায় বসবাসকালীন তার মা গোপনে লাকসাম এলাকায় বিভিন্ন সময়ে যাতায়াত করে এবং বুঝতে পারে ২০০৭ সালের হত্যাকান্ডের বিষয়টি এলাকায় তেমন কোন আলোচনা নেই তাই আসামী রাসেল ২০২০ সাল থেকে বরুড়ায় তার মায়ের সাথে ভাড়াবাসায়
বসবাস শুরু করে। আসামী রাসেল মূলতঃ বরুড়ায় তার বাড়ির আশেপাশে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসাবে কাজ শুরু করে। এক বছর অতিক্রম হয়ে গেলে পদ্মা পরিবহণে হেল্পারের কাজ শুরু করে। ২০২২ সালে আসামী বোগদাদ পরিবহণে হেল্পারের কাজ শুরু করে।
এ ঘটনায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত বাকী আসামীরা হলেন লাকসামের আব্দুল কাদের এর ছেলে আব্দুর রহমান, ইয়াকুব আলীর ছেলে শহীদুল্লাহ, আব্দুল মান্নানের ছেলে ফারুক হোসেন ও মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে স্বপন।
১৪ নভেম্বর ২০১৮সালে কুমিল্লার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের আদালতের বিচারক নুর নাহার বেগম শিউলী আলোচিত ও নিমর্ম হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষনা করেন।
উল্লেখ্য এ ঘটনায় ভিকটিম বাচ্চু মিয়ার ভাই কবির হোসেন ৭ জানুয়ারি ২০০৭ ইং তারিখে বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানায় খুন সহ ডাকাতি’র একটি মামলা দায়ের করেন।
আসামিদের মধ্যে রাসেল ও স্বপন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হয়ে ১৬ বছর ধরে পলাতক থাকার পর অশেষে মোঃ রাসেল র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন।
এ মামলার অন্য তিন আসামি আবদুর রহমান, ফারুক হোসেন ও শহীদুল্লাহ কারাগারে রয়েছেন।
#