গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।। ডেঙ্গু রোগের কোনো ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়নি। সামগ্রিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি সবিশেষ মনোযোগী হলেই কেবল ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। কালজয়ী জীবনাদর্শ ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আজকে আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ইসলামের অনন্য কিছু কথা বলব ইনশাআল্লাহ।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিস শরিফে বিভিন্ন জায়গায় বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে এবং যারা পূত;পবিত্র থাকবে, তাদের জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও সওয়াবের।
মদিনার নিকটবর্তী কোবা এলাকার লোকজন পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করত। তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেখানে এমন লোকেরা রয়েছে, যারা ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে পছন্দ করে। আর আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন’ (সূরা তাওবা-১০৮)
আরো বর্ণিত আছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের’ (সূরা বাকারা-২২২)।
প্রিয়নবী সাল্বলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , ‘তোমরা তোমাদের উঠান ও আঙিনা পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে রাখো’ (জামে তিরমিজি-৭৭৬৯)।
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সালাত, এই সালাতের জন্য পূর্বশর্ত হল পবিত্রতা (অজু) অর্জনকে। আরেক হাদিসের মধ্যে পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধেক বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
হযরত আবু মালেক আশআরি রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক’ (মুসলিম ২২৩)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা যখন সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন নিজেদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও, কিংবা পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নেবে’ (সূরা মায়িদাহ-৬)।
(মহামারির আকার ধারণ করছে ডেঙ্গু। প্রবাদে আছে,‘রোগ প্রতিরোধ রোগ নিরাময় থেকে শ্রেয়।’তাই ডেঙ্গু হওয়ার পূর্বে ইসলামের আলোকে প্রতিরোধ সম্ভব। দরকার সচেতনতা আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা)
এক মার্কিন গবেষক তার প্রবন্ধে লিখেছেন, আমি ডিপ্রেশন (মানসিক রোগে) আক্রান্ত কয়েকজন রোগীকে প্রতিদিন পাঁচবার মুখ ধৌত করিয়েছি। কিছু দিন পর তাদের রোগ কমে যায়। অতপর, আরো কিছু রোগীদের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করলাম এবং সেই সাথে দিনে পাঁচবার হাত, মুখ ও পা ধোয়ার ব্যবস্থা করলাম।
এবার তারা অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেলেন। এই গবেষক তার প্রবন্ধের উপসংহারে অকপটে স্বীকার করেছেন, মুসলমানদের মধ্যে মানসিক রোগ কম দেখা যায়। কারণ, তারা দিনে কয়েকবার হাত, মুখ ও পা ধুয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের সহজ ওষুধ হলো অজু।
এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীকে প্রথমে অজু করিয়ে দিন, তারপর ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করুন, দেখবেন প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মুসলিম গবেষক বলেন, মানসিক রোগের কার্যকরী চিকিৎসা হলো অজু।জীবন পরিচালনার জন্য মানুষ যাই করুক না কেন তা যদি আল্লাহ ও রসূলের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী হয় তবে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে। কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা এবং সরকারের দেওয়া পদ্ধতি যদি আমরা সঠিকভাবে মেনে চলি তাহলে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন বিপর্যয় থেকে মুক্তি এবং সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকা সম্ভব(যত দিন হায়াত) আছে দুনিয়ার জীবনে। ইনশাআল্লাহ।
#