গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির, বুড়িচং,কুমিল্লা।। কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলা জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে সেজেছে কৃষকের মাঠগুলো। সরিষার ফুলে বাতাসের দোলায় দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন । এ যেন হলুদে শাড়ি পরে লাখো নববধূ বিচরণ করছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠগুলোতে।
উপজেলার ময়নামতি, ভরাসার, পাহাড়পুর, বাকশীমূল, দক্ষিণগ্ৰামসহ বিভিন্ন এলাকায় সরিষার হলদে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠের পর মাঠ। মাঠের দিকে তাকালে দিগন্তজুড়ে যেন হলুদ গালিচা বিছানো হয়েছে। চলতি মৌসুমে সরিষা চাষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা এবারও ছাড়িয়ে যাবে। কম খরচে অধিক লাভ, তাই সরিষা চাষের প্রতি দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকেরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের কালিকাপুরে ফসলের মাঠগুলোর দিকে তাকালেই মনে হয় ফসলের মাঠ যেন সেজেছে গায়ে হলুদের সাজে।
মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ রাজার দেশে মৌমাছির মধু সংগ্রহের গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের মাঠ। সরিষার ফুলে বাতাসের দোলায় দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। সরিষা চাষে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। সরিষা চাষে সময় ও খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। এতে করে কৃষকরা লাভবানের পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মিটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে ব্যাপক পরিমাণে সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষকরা বারী ১৪, ১৭, ১৮ ও বীনা ৮, ৯ ও ১১ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। কৃষি সংশ্লিষ্টদের মতে, পলি মিশ্রিত জমি সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সেচ, সার ও অন্যান্য খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষে লাভ হয় বেশি। তা ছাড়া সরিষার তেল সয়াবিন তেলের চেয়ে অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানান, বেশি ভাগ জমিতে কৃষকরা দুটি ফসল উৎপাদন করে থাকেন; কিন্তু সেই জমিতে সরিষা চাষ করলে ওই জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন করা যায়। এতে একদিকে যেমন কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন,অপর দিকে পুষ্টিকর ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটছে। তাই তারা সরিষা চাষ করতে কৃষকদের বিনামূল্য সরিষার বীজ ও সার দিয়ে উৎসাহিত করছেন।
কৃষকরা জানান, আমন কাটা ও মাড়াইয়ের পর ৩-৪ মাস পর্যন্ত জমি পতিত থাকে। এই সময়ে পতিত জমিতে বাড়তি লাভের আশায় সরিষা চাষ করেন তারা। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে অল্প সময়ে একই জমিতে দুটি ফসল চাষে লাভবান হওয়া যায়। জমিতে সরিষা রোপণ করা থেকে পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস।
প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ। সরিষার দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে ইরি বোরো চাষে খরচ করা যায় পাশাপাশি তাদের ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটানো হয়। বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কৃষক বাকী বিল্লাহ, ইসমাইল ও ইমাম হোসাইন বলেন, আমরা দুই বিঘা করে জমিতে সরিষা চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে দুই হাজার টাকা করে ব্যয় হয়েছে। সরিষার ক্ষেতে গেলে প্রাণটা ভরে যায়।
তারা বলেন, আশা করছি ভালো ফলন হবে। এই সরিষা বিক্রি করে বোরো আবাদের তেল ও সার কেনার টাকা জোগাড় হয়ে যাবে। এ ছাড়া বর্তমানে সয়াবিন তেলের দাম বেশি। তাই বিকল্প হিসেবে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারবো। তা ছাড়া সয়াবিন তেলের চেয়ে সরিষার তেলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। অপরদিকে মনজুড়ানো সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছিরা গুন গুন করছে। মৌমাছিরা মধু সংগ্রহে মাঠে মাঠে এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ছুটে বেড়াচ্ছে। মৌ চাষীরাও মধু সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিণা আক্তার বলেন, ভোজ্য তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী যেহেতু তেল উৎপাদন কম হয়। তাই আমরা একটা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি। আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তৈলাক্ত ফসলের ৫০ ভাগ আমাদের দেশ থেকে উৎপাদন করতে চাই। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কৃষকদের সরিষা চাষ করতে প্রণোদনা দিচ্ছি ও কৃষকদের লাভের জন্য দুই ফসলি থেকে তিন ফসলি জমি তৈরি করতে উৎসাহিত করছি।
#