গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির, বুড়িচং, কুমিল্লা ।।কুমিল্লায় তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঠান্ডায় কপোকাত নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা শীত নিবারণে ভাসমান দোকানগুলোতে ভিড় করছেন। ওইসব দোকানের গরম কাপড়ের কদর বেড়েছে।
তাপমাত্রা কমতে থাকায় কুমিল্লা জেলাট বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, উপজেলা সহ প্রায় সবকটি উপজেলায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কনকনে ঠান্ডায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ফলে মানুষ দিনরাত গরম কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখছেন। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় শুক্রবার কুয়াশা কিছুটা কমেছে রৌদ ও কিছুক্ষণ দেখা গেছে। তারপরেও রাতে বৃষ্টির মতো ফোঁটা ফোঁটা ঝরছে কুয়াশা।
ঠান্ডার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী, ছিন্নমূল ও অতি দরিদ্র মানুষজন। এ ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার লোকজন। শীত ও কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে কাজে যেতে না পারায় কষ্টে পড়েছেন শ্রমজীবীরা।
বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়নের রবিউল হোসেন বলেন, ‘আমি হোটেলে কাজ করি, সকালে পানির কাজ করতে হয়। ঠান্ডার কারণে হাত পা বরফ হয়ে যায়। কয়েকদিন থেকে ঠান্ডা বেশি পড়ছে। বৃহস্পতিবার কুয়াশা একটু কম, কিন্তু ঠান্ডার মাত্রা কমেনি।’
ভ্যান চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন,সাত সকালে বের হতে এবং ভ্যান চালাতে অনেক কষ্ট হয়। তবুও পেটের দায়ে বের হতে হয়। আমাদের খবর নেওয়ার কেউ নেই।সে আক্ষেপ করে বলে এখন নির্বাচন চলছে। তারা পাশ করে দেশ চালাবে,ভাল কথা। কিন্তু আমাদের মত মানুষদের তো কেউ খবর ও নেয় না।শুনি অনেকে টাকা দেয় , অনেকে পায়।অথচ আমরা কত কষ্ট পাচ্ছি।
বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর হোসেন মিঠু বলেন, এ হাসপাতালে সর্দি-জ্বরের রোগী তেমন ভর্তি নেই। তবে কয়েকদিনে শীতজনিত আউটডোরে ৫ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় শিশু-বৃদ্ধরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে সর্দি, কাশি ও হাপানিজনিত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে শীত বস্ত্রের অভাবে দরিদ্র লোকজন খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঘন কুয়াশার প্রভাবে রবি শস্যসহ বোরো বীজ তলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ছোট বড় শীতের পোশাকের কদর বেড়েছে ফুটপাতের দোকানে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট কেনাবেচা হচ্ছে ভাসমান দোকান গুলোতে। কদর বেড়েছে ফুটপাতে বিক্রি করা শীতবস্ত্রের।
জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিশেষ করে বুড়িচং উপজেলা প্রধান ফটকের সামনের রাস্তার পাশে, হাসপাতাল রোডে, সদরের মধ্য বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ভাসমান দোকানিরা শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ রিকশাভ্যানে কমদামি শীতের পোশাক, আমদানি করা পুরনো শীতের পোশাক ফেরি করছেন অলিগলিতে। বেশি বিক্রি হচ্ছে শিশুদের সোয়েটার, মোটা কাপড়ের গেঞ্জি সেট, মাথার টুপি, হাত ও পায়ের মোজা, ছোটদের কম্বল, লেপ-কাঁথা, গলাবন্ধনী, শাল ইত্যাদি।
ছোটদের পোশাকের পাশাপাশি বড়দেরও শীতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। শীত বেশি হলে ভারী গরম কাপড়ের চাহিদা যেমন বাড়বে তেমনি দামও বাড়তে পারে বলে জানান বিক্রেতারা। তারা জানান, ফুটপাতে সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের গরম পোশাক। যার মধ্যে রয়েছে শিশুদের জিন্সের ফ্রক, স্কার্ট, উলের পোশাক, বেবি কিপার, রেকসিনের জ্যাকেট, ওভারকোট, কার্ডিগান, মাফলার ও নতুন ডিজাইনের কানটুপি। পাওয়া যাচ্ছে এসব পোশাক দোকানগুলোতে।
#