নেকবর হোসেন, কুমিল্লা।। কুমিল্লায় লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ১০৭টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে তালিকা। ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৮টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন লাইসেন্সের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং ১৯টি প্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ রয়েছে।
কুমিল্লা মহানগরীর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রয়েছে মোট ১৪৬টি প্রতিষ্ঠান তার মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠানেরই নেই রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স। জেলায় লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা রয়েছে মোট ৪৬৬টি।
কুমিল্লা মহানগরী সহ জেলার ১৭টি উপজেলায় মোট ৫৭৩টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে বলে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন নাছিমা আক্তার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স পেতে হলে পরিবেশ সনদ, নারকোটিক (মাদক) সনদ, ফায়ার লাইসেন্সসহ মোট ২১টি শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলো ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান রোগীকে সেবা দিতে নিবন্ধিত হতে পারেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব অনিবন্ধিত বা লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের আড়ালেই অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসা দেয়ার কারনে প্রতিনিয়তই ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ২০২৩ সালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কয়েকটি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসার কারনে প্রাণহানির ঘটনায় সারা দেশে সমালোচিত হয়। পরে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৪৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রোগীদের সেবা প্রদানের পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স নেই । দাউদকান্দিতে লাইসেন্স নেই ১০টির, লাকসামে লাইসেন্স নেই ৯টির, চৌদ্দগ্রামে লাইসেন্স নেই ৮টির, নাঙ্গলাকোটে লাইসেন্স নেই ৭টির, মুরাদনগরে লাইসেন্স নেই ৪টির, বরুড়ায় লাইসেন্স নেই ৫টির, বুড়িচংয়ে লাইসেন্স নেই ১টির, ব্রাহ্মণপাড়ায় লাইসেন্স নেই ৫টির, তিতাসে লাইসেন্স নেই ৯টির, মেঘনায় লাইসেন্স নেই ৮টির, মনোহরগঞ্জে লাইসেন্স নেই ৪টির, লালমাইতে লাইসেন্স নেই ৬টির, হোমনায় লাইসেন্স নেই ৫টির, চান্দিনায় লাইসেন্স নেই ৫টির এবং সদরে লাইসেন্স নেই একটির। এর মধ্যে একমাত্র উপজেলা দেবিদ্বার, যেখানে সব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স রয়েছে।
কুমিল্লা বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইস আবদুর রব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমাদের উচিত প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আগে গ্রহণ করা, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা আগেই প্রতিষ্ঠান খুলে বসি। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন, আশা করি কুমিল্লার লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলার সিভিল সার্জন নাছিমা আক্তার জানান, লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যাদের লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অধিদপ্তর নির্দেশনা দেওয়া হবে। আর যাদের লাইসেন্স নেই তাদের প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বন্ধ করা হয়েছে। আমরা সব প্রতিষ্ঠানকেই পর্যবেক্ষণে রেখেছি। যাদের বিরুদ্ধেই নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
#