প্রভাত সংবাদ ডেস্ক ।। কুমিল্লায় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের উপর নিমসার কাঁচা বাজার দেশের অন্যতম বৃহৎ কাঁচা সবজি বাজার। এ বাজারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কাঁচা মালামাল কেনা বেচা হয় রাত থেকে সকাল ভোর পর্যন্ত।
জমিনে উৎপাদিত ফলন বাজারে কম দামে বিক্রি হলেও হাত বদলের পর-ই সেই সব্জীর দাম বেড়ে যায় কয়েকগুন।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বাজারের বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা কেজি ধরে, গাজর ১০ টাকা, দেড়স ৩০ টাকা, শসা ২০ টাকা, পেপে ১৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ১০ টাকা কেজি, টমেটো ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হলেও এ বাজার থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দুরে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন
বাজারে সেই সব্জি বিক্রি হচ্ছে কয়েকগুণ দামে।
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার কৃষক মনির হোসেন, রহমত আলী, মজিদ মিয়া সকালে নিমসার বাজারে ধনিয়াপাতা বিক্রি করে গেছেন ১০ টাকা কেজি ধরে, কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছেন ২০ টাকা কেজি ধরে। নিমসার বাজারের আড়তদার মোঃ সালমান মিয়া, শামীম মিয়া, মোহাম্মদ আলীসহ অনেককে এগুলো পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন ধনিয়াপাতা ১৫ টাকা ও কাঁচা মরিচ ২০ টাকা ধরে।
নিমসার বাজার থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা, নজরুল এভিনিউ, রানির বাজার ও নিউমার্কেটে খুচরা সবজি বিক্রেতা নূর হোসেন ১৫ টাকা কেজির ধনিয়া পাতা বিক্রি করছেন ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি ধরে।কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি ধরে।
কুমিল্লার বুড়িচং এর সৈয়দপুর এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হোসেন জানান, তার জমিতে বড় সাইজের বাঁধাকপি ব্যাপারীরা দাম দিচ্ছেন ৬ থেকে ৭ টাকা। অথচ কয়েক হাত বদল হয়ে বাজারে এ কপি বিক্রি করা ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আমরা ব্যাপারীর কাছে পুরো জমির সব কপি একবারে বিক্রি করে দেই। মাঝে মধ্যে কিছু লাভ হলেও অনেক সময় আমাদের পুঁজি উঠানো যায়না।
কথা হয় নিমসার বাজারের জাবালে নূর বানিজ্যালয়ে আসা ব্যাপারী মোঃ আবুল হাসেম মিয়ার সাথে তিনি এ বাজারে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে এসেছেন, তিনি বলেন প্রথমে মিষ্টি কুমড়ার জমির বিঘা প্রতি ৪০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। এখন কিনতে পারছেন ২০ হাজার টাকায়। প্রথমে কৃষক কিছুটা লাভ পেলেও এখন তাদের লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। সময়মত অনেক সবজি বিক্রি করতে না পারলে কৃষকদের সবজি নষ্ট হয়ে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বাজারের চাহিদার উপর আমাদেরও লাভ-লোকসান আছে।
এ বিষয়ে কথা হয় নিমসার বাজারের জাবালে নূর বানিজ্যালয়ের মোঃ সুমন মিয়া, নোয়াখালি মাইজদী বানিজ্যালয়ের আব্দুর রহমান, লিটন বানিজ্যালয়ের মোঃ শাহালম মিয়া, আনন্দ বানিজ্যালয়ের নজরুল ইসলামসহ অনেকের সাথে। তারা জানান, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী আড়ত এ সবজি নিয়ে আসে। বাজারে যখন যে দাম থাকে আমরা সে দামে বিক্রি করে দেই। আমরা শুধু নিদিষ্ট একটা কমিশন রাখি।
নগরীর রাজগঞ্জ চকবাজার, রানীর বাজারসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, প্রতিটি বাজারেই সিন্ডিকেট রয়েছে। এসব সবজি বাজারে আসার আগে সিন্ডিকেট তার দাম নির্ধারন করে দেয়। কেউই নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে বিক্রি করতে পারবেনা। খুচরা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তারাই নিয়ন্ত্রণ করে।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী পরিচালক আছাদুল ইসলাম বলেন, জেলার ১৭টি উপজেলায় আমি একজন মাত্র কর্মকর্তা বাজার তদারকি করছি। আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রমজান মাসেই আমরা নিমসার কাঁচাবাজারসহ নগরীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে প্রায় ১৪টি অভিযান পরিচালনা করেছি। এসময় ব্যবসায়ীদের ক্রয় ভাউচার যাচাই বাচাই করে অযাচিত ও অতিরিক্ত দাম রাখার দায়ে জরিমানাসহ সর্তক করেছি। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
#