গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন- ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে।’ আর মৃত্যুর মাধ্যমেই দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি আসে এবং আখেরাতের অনন্ত-অসীম জীবনের সূচনা হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের চারটি আয়াতে মৃত্যু যন্ত্রণার স্বরূপ বর্ণনা করেছেন। সেগুলো তুলে ধরা হলো:-
প্রথম আয়াত: ‘মৃত্যু যন্ত্রণা অবশ্যই আসবে’ (সুরা কাফ ১৯)।
দ্বিতীয় আয়াত: ‘যদি তুমি। ওই জালেমদের দেখতে পেতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকবে’ (সুরা আনআম ৯৩)।
তৃতীয় আয়াত: ‘অতঃপর যখন কারও প্রাণ কণ্ঠাগত হয়’ (সুরা ওয়াকিয়াহ ৮৩)।
চতুর্থ আয়াত: ‘সাবধান! যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হবে’ (সুরা কিয়ামাহ ২৬)।
মহান আল্লাহ এক আশ্চর্যকর বিবরণ ও ধারাবাহিক চিত্রের মাধ্যমে মৃত্যুর দৃশ্যের বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘সাবধান! যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। বলা হবে, কে তাকে রক্ষা করবে? দুনিয়া হতে বিদায়ের ক্ষণ যে এসে গেছে। পায়ের সঙ্গে পা জড়িয়ে যাবে। অবশেষে আপনার পালনকর্তার নিকট সমর্পিত হবে’ (সুরা কিয়ামাহ ২৬-৩০)।
হযরত সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘যখন জান
কবজকারী ফেরেশতা মানুষের মনের রন্ধ্র স্পর্শ করে ,তখন থেকে ওই ব্যক্তি আর অন্যদের চিনতে পারে না। তার মুখ তখন বন্ধ হয়ে যায়। দুনিয়ার সবকিছুর কথা ভুলে যায়। এ সময় তার এত বেশি কষ্ট হয় যে, যদি সে সময় মৃত্যুর ভার তার ওপর চড়ে না বসত, তাহলে আশপাশের
লোকদের ওপর সে ছুরি চালিয়ে দিত।’
হযরত হাসান (রা.) বলেন, মৃত্যু যন্ত্রণার কথা উল্লেখ করে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তলোয়ার দ্বারা ৩০০ বার হযরত ঈসা (আ.) বলেন, ‘হে বন্ধুগণ! মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করো, তিনি যেন আমার ওপর মৃত্যু যন্ত্রণা সহজ করে দেন। মৃত্যু যন্ত্রণা যে কত কঠিন, তা বুঝতে পেরে সে ভয়ে আমি জীবন্ত মৃত হয়ে রয়েছি।’
হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দুনিয়ার জীবন থেকে বিদায় বেলায় এ দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! মুহাম্মদের ওপর মৃত্যুযন্ত্রণা সহজ করো।’ হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যার ওপর মৃত্যু যন্ত্রণা সহজ হয়, তার সৌভাগ্যের কোনো আশা আমি করি না। কারণ রাসুল (সা.)-এর পবিত্র দেহ হতে জীবন বের হওয়ার সময় মৃত্যু যন্ত্রণা আমি নিজ চোখে দেখেছি। সে সময়ে তিনি বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! অস্থি ও শিরাসমূহ হতে তুমি রুহ টেনে বের করছ, এ যন্ত্রণা আমার জন্য সহজ করো।’
আঘাত করলে যে রূপ যন্ত্রণা হয়, মৃত্যু যন্ত্রণাও সেরূপ।’ অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে মৃত্যু সবচেয়ে সহজ হয় সেটার কষ্ট হলো লোহার পেরেক এমনভাবে পায়ে বিঁধার মতো যে, তা আর বের করা সম্ভব নয়।’
হযরত সাবেত (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) মৃত্যুর যন্ত্রণা সম্পর্কে বলেন, অন্য কোনো বিষয়ের জন্য নয়, মানুষ যদি শুধু মাত্র মৃত্যু যন্ত্রণার কথা ভেবে আমল করে তাহলেই তার জন্য যথেষ্ট।’ (শরহে সুদুর ১/৩৫)
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মুসা (আ.)-এর মৃত্যুর পর আল্লাহ তায়ালা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে মুসা! মৃত্যুকে তুমি কেমন পেয়েছ? মুসা (আ.) বললেন, মৃত্যুর সময় আমার অবস্থা ফুটন্ত পানির মধ্যে ডুবে যাওয়া জীবন্ত পাখির মতো ছিল। না সে মরে শান্তি পাচ্ছে, না উড়তে পেরে কষ্ট থেকে মুক্তি পাচ্ছি।’ (শরহে সুদুর ১/৩৯) হযরত কাবুল আহবার (রা.) হযরত ওমর (রা.)-কে মৃত্যু যন্ত্রণার অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, মহান আল্লাহ যেন আমাদের ওপর মৃত্যু যন্ত্রণা সহজ করে দেন, এজন্য আমাদের বেশি বেশি নেক আমল করা উচিত। এ ছাড়া আমাদের করণীয় হলো, তিনি আমাদের যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকা। আর যেসব কাজের নির্দেশ দিয়েছেন সেসব কাজ যথাযথভাবে পালন করা।
‘কাঁটাযুক্ত একটি ডাল পেটের ভেতর ঢুকে গিয়ে এক একটি রগে বিঁধে গেলে সেটি টেনে বের করতে যেরূপ কষ্ট হয়, মৃত্যু যন্ত্রণাও সেরূপ।’ হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মৃত্যু একটি চৈতন্যবিনাশী ভয়ংকর বস্তু। মুমিনের জন্য মৃত্যুর কষ্ট করাত দিয়ে চিরা, কেঁচি দিয়ে কাটা এবং ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করার চেয়েও কষ্টকর। মৃত্যুর পর কোনো ব্যক্তি যদি মৃত্যু যন্ত্রণার কথা দুনিয়াবাসীর নিকট বলে দিত তাহলে তারা সর্বপ্রকার আরাম আয়েশের কথা ভুলে যেত এবং তাদের জন্য ঘুম হারাম হয়ে যেত।’ (শরহে সুদুর ১/৪২)
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মানুষের জন্মের পর থেকে নিয়ে গোটা জীবনে যতগুলো কষ্ট সে পায় এর মধ্যে মৃত্যু যন্ত্রণার কষ্টই সবচেয়ে বেশি’ (শরহে সুদুর ১/৪১) । হযরত মায়সারা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘মৃত্যুর প্রকৃত যন্ত্রণার এক ফোঁটা যদি আকাশ ও জমিনের অধিবাসীদের ওপর ঢেলে দেওয়া হয় তাহলে সবাই মরে যাবে। আর কেয়ামতের একটি মুহূর্ত মৃত্যুর কষ্টের চাইতে ৭০ গুণ বেশি যন্ত্রণাদায়ক হবে’ (শরহে সুদুর ১/৪০)।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও চেয়ারম্যান -গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।
#