প্রভাত সংবাদ ভেষজ ডেস্কঃ দারুহরিদ্রা গাছ ৩ থেকে ৭ বা ৮ ফুট পর্যন্ত উচু হলেও শাখাগুলি নিম্নভিমূখী, পাতাগুলির কিনারা (ধার) দাঁতযুক্ত, শাখাগ্রে সরু সরু কাঁটা থাকে, কিন্তু এই গাছ সমতলে হয় না। নীলগিরি ও হিমালয়ের বিভিন্নপ্রান্তে সাধারণত ৩ থেকে ১১ হাজার ফুট উচ্চতার মধ্যে জন্মে। দারুহরিদ্রা গাছের ফুল হয় বসন্তকালে আর ফল হয় গ্রীলকালে। এই গাছের ছোট কিসমিসের মতো শুকনো ও টক ফলগুলি ইউনানি চিকিৎসক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে। দুই প্রজাতির দারুহরিদ্রা পাওয়া যায় এদের বৈজ্ঞানিক নাম Berberis aristata এবং Berberis asiatica. এই দুই ধরণের গাছই ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ঔষধি গুণ:
************
ব্রণ বা মেচেতায়: এই কাঠ ঘষে চন্দনের মতো করে লাগালে বিশেষ উপকারী পাওয়া যায়।
মুখের ক্ষতে: এই কাঠ ঘষা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে লাগালে উপশম হয়।
রক্তপ্রদরে: (মেনোরিজিয়া, Menorrhagia) এই গাছের ছালের ক্বাথ ব্যবহার করতে হয়।
শ্বেতপ্রদরে: (লিউকোরিয়ায়, Leucorrhoea) এর ক্বাথ ব্যবহার, এমনকি কাঠ ঘষে চন্দনের মতো করে (১ চামচ) দুধ সহ খেলে উপকার হয়।
রক্তার্শে (Bleeding piles): এই বনৌষধিটি ব্যবহারের কথা চরকে কয়েক বার বলা হয়েছে, তাছাড়া ওয়াট সাহেবের গ্রন্থেও দেখা যায় যে, ডাক্তার পানি (Dr. Panny) ৫-১০ গ্রেণ মাত্রায়, ঐ কাঠ থেকে তৈরী রসোত মাখনের সঙ্গে ব্যবহার ক’রতে (খাওয়ার জন্য) দিতেন এবং ঐ রসোতের জল তৈরী করে অর্শের বলি ধুতে বলতেন। তবে বর্তমান সময়ে ভাল রসোত যখন পাওয়া যাচ্ছে না, তখন ঐ কাঠ যথা নিয়মে সিদ্ধ করে সেই জল ব্যবহারে ক্ষতি কি?
ব্রণের গর্ত পূরনে (ঘা পুরাবার জন্য): দারুহরিদ্রার সিদ্ধ ক্বাথ তৈলের সঙ্গে পাক করে সেই তৈল ক্ষতে ব্যবহার করলে ক্ষতটি তাড়াতাড়ি পরে যাবে। এক্ষেত্রে যতখানি তৈল (তিলের) নিতে হবে, তার দ্বিগুণ দারুহরিদ্রা নিয়ে ক্বাথ করতে হবে। এ পদ্ধতি আয়ুর্বেদীয় তৈল পাকের।
পিষ্টক মেহে: যাদের প্রস্রাব চটচটে রকমের হয়, তাঁরা এই দারুহরিদ্রা আর হলুদ সমপরিমাণ নিয়ে (৬ গ্রাম পরিমাণে) ক্বাথ করে প্রত্যহ সকালে কাঁচা দুধ মিশিয়ে খাবেন। (এটা সুশ্রুতের যোগ।)
কোষ বৃদ্ধিতে (Hydrocele): মেদস্বী দেহ, শরীরে কফের প্রাধান্য যেখানে, সেক্ষেত্রে দারুহরিদ্রার কাষ্ঠ ১ থেকে ২ গ্রাম নিয়ে থেতো করে পানি দিয়ে বেটে সেটা ছেকে খেতে হবে।
নেত্ররোগে: গরম জলে দারুহরিদ্রা (৩ গ্রাম) থেতো করে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ৪। ৫ ঘণ্টা অন্তর খেতে দিলে চোখ লাল, ব্যথা, ফুলা, জলঝরা, পিচুটি পড়া ইত্যাদি নিবৃত্তি পায়। (এটাও বাগভটের।)
তথ্যসূত্রঃ চিরঞ্জীব বনৌষধি।
#