1. provatsangbad@gmail.com : প্রভাত সংবাদ : প্রভাত সংবাদ
  2. mdjoy.jnu@gmail.com : dainikjoybarta.online : Shah Zoy
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
যুগে যুগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুমিল্লা(দঃ)জেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের আহব্বায়ক কমিটি গঠন; তাজুল ইসলাম আহবায়ক, জালাল সদস্য সচিব চৌদ্দগ্রাম হোসেনপুরে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ; সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা দুই ভাই কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, চলছে ঘরে ওঠার প্রস্তুতি ব্রাহ্মণপাড়ায় বাড়ির উঠানে আসা বন্যার পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু বুড়িচংয়ে বন্যার্তদের পাশে আলোকিত যুব উন্নয়ন সংস্থা কুমিল্লা জেলা ও মহানগর শ্রমিক দলের উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে ত্রান বিতরন বুড়িচংয়ে বন্যা কবলিত দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে জিকরুল্লাহ ইসলামীয়া যুব কমিটির ত্রাণ বিতরণ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা কুমিল্লায় অনুমতি ছাড়া ক্যাম্প ত্যাগ করায় চাকুরি হারালেন ৯৬ আনসার

কুমিল্লায় ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, সতর্ক থাকার আহ্বান

  • প্রকাশিত: বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

শিশির সমরাট ।। কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর ৪৫ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অব্যাহত বর্ষণ আর ভারতের পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে নেমে আসা পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেরীবাঁধে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। আতংকিত হয়ে পড়েছেন গোমতীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা। সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, সদর উপজেলা ও জেলা প্রশাসন।

বুধবার সকাল সাড়ে ৮ টায় সদর উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, গোমতী নদীর পানি বেরীবাঁধের উত্তর পাশে পালপাড়া অংশে বাঁধ থেকে গড়ে ৩.৫-৪.৫ ফুট নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোমদী নদীর দক্ষিণ অংশে অর্থাৎ শহরের পাশে বাঁধ থেকে গড়ে ০৬-০৭ ফুট নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত ৬ ঘন্টায় প্রায় ১২-১৫ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলা গড়ানোর সাথে সাথে আরো উচ্চতায় বাড়ছে পানির পরিমান।

মঙ্গলবার রাত ১০টার পর থেকে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসময় নদীর বাঁধ ঝূঁকির মুখে পড়ায় পর্যবেক্ষণে বের হয় পানি উন্নয়ণ বোর্ড, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ। তারা কামাড়খাড়া ও বাবুবাজার এলাকাবাসীর কাছে বাঁধে ফাঁটলের খবর পেয়ে ফাঁটল রোধে বালুর বস্তা সরবরাহ করেছে বলে জানায় স্থানীয়রা। এদিকে পানি প্রবাহ ও উচ্চতা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় নদীর পাড়ের মানুষজনকে আতংকিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ভারতের ত্রীপুরা এলাকায় মাইকিং করে সে দেশের গোমতী নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয় এই বলে যে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে ডুম্বর জ্বলাশয়ের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলে দেওয়া হচ্ছে ডুম্বুর গেট। ফলে সেই পানি অব্যাহত ভাবে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। সতর্ক বার্তা প্রচারের একটি ভিডিও ইতিপূর্বে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
উল্লখ্য সর্ব শেষ ১৯৮৩ সালে এক বার এই গেইট খোলে দেয়া হয়ে ছিলো এর পর আর খোলা হয়নি।

কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান,পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক টীম বাঁধ পর্যবেক্ষণে আছে। আমরা গোমতী পাড়ের মানুষজনকে বলেছি- তারা কোথাও কোন বাঁধে ফাঁটল বা ঝুঁকি দেখেলে যেন পানি উন্নয়ণ বোর্ডকে সাথে সাথে জানায়।
গোমতী বাঁধ সংলগ্ন দূর্গাপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত দুইদিন ধরেই নদীর পানি বাড়ছে। তবে মঙ্গলবার বিকাল ৪টার পর থেকে পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়। একই সাথে স্রোতের গতিও বেড়ে যায়। গোমতীর বেরীবাধঁ ঘুরে দেখা যায়, গোমতী পাড়ের বাবুর বাজার, এতবারপুর, ছত্রখিল, কামাড়খাড়া বাঁধ ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
বিগত সময়ে মাটি খেকোরা বেরীবাঁধ সংলগ্ন হতে অবৈধ ভাবে নিচের অংশের মাটি কেটে নেয়ায় বাঁধের গা ঘেঁষে অস্বাভাবিক গভীরতা তৈরী হয়েছে। এখন উপরের বাঁধের মাটি খসে খসে নদীতে পড়ছে। আর বাঁধ ঝুঁকিতে পড়ছে।  কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দূর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নে জেলে পাড়া, আলেখারচর ব্রিজ সংলগ্ন গোমতী বাঁধ আংশিক ধসে গেছে।

পানি বেড়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠার মাঝে রয়েছেন নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় চর ডুবে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিচু এলাকার বাড়িঘরে প্রবেশ করছে পানি। দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের জেলেপাড়া এলাকায় গোমতীর আইলে দেখা দিয়েছে ফাটল। এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অঘটন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে গোমতী নদীর টিক্কারচর পয়েন্টে ১০ দশমিক ৫০ মিটার উচ্চতায় গোমতীর পানি প্রবাহমান ছিলো। এখানে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭৫ মিটার পর্যন্ত। যা বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই রাত ১০ টার পর অনেক উচ্চতায় বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। যা ৯০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
গোমতী নদীর আলেখারচর, আমতলী, বালি খাড়া, কামার খাড়া, টিক্কারচর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পানি বেড়েছে। অধিকাংশ স্থানে নদীর চর পর্যন্ত ডুবে গেছে। পানি আইলের কাছাকাছি উঠে এসেছে। চর ভূমিতে চাষাবাদ করা নানান শাক সবজি ও অন্যান্য ফসল এখন পানির নিচে।
কৃষকরা নদীর চরে চাষাবাদ করেই মূলত তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। গোমতীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে অনেক কৃষকের লাউ, ঢেঁড়স, ঝিঙ্গা, মূলা, লাল শাক, পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নদীর চরের কাছে দাঁড়িয়ে হা-হুতাশ করছেন। কেবল চরের ফসল নয়, চর এলাকায় বসবাস করা বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় মালামাল সরাতে ব্যস্ত দেখা যায় অনেককেই।

অপর দিকে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতে উজানের পানি প্রবেশ করায় এবং সে পানি খাল দিয়ে ঠিকমতো নিষ্কাশন হওয়ায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ। উপজেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি প্রবেশ করায় চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। কাঁকড়ি নদীতে মাটি কেটে নেয়ায় বেরীবাধঁ ধসে পরার শঙ্কাও রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে অবস্থিত খাল ও নদীতে কিছু ব্যক্তি জাল ও বাঁশ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে রেখেছে। ফলে গত দুই দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানির চাপে বিভিন্ন গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এছাড়া ঐ সকল এলাকায় সুপেয় পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাতভর বৃষ্টিতে উপজেলার অধিকাংশ মাছের প্রজেক্ট, দীঘি ও পুকুর ভেসে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার বন্যার পানিতে চলে গেছে। বন্যার পানি উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় ঢুকে করায় নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বন্যার পানি প্রবেশ করায় জরুরি ও বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। হাসপাতালে রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় করা হলেও বুক সমান পানি থাকায় রোগীরা বাড়িঘরে ফিরতে পারছে না।

একটি পোলট্রি ফার্মের মালিক জানান,বন্যার পানি তার দু’টি পোলট্রি ফার্মে প্রবেশ করায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা মূল্যের লেয়ার মুরগি মারা গেছে।
একজন ফিশারিজের মালিক জানান, আকস্মিক বন্যায় তার দু’টি দীঘি ও তিনটি পুকুরের আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে।

গুণবতী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল বলেন, বন্যায় গুণবতী ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলার কাশিনগর এলাকার স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন ‘কাঁকড়ি নদীর মাটি বিক্রি করছে বিগত সরকারের আশির্বাদ পুষ্ট একটি চক্র। যার ফলে হুমকির মুখে পড়ছে কাঁকড়ি নদীর পাড়ের সাধারণ মানুষ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো: গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, ‘আকস্মিক বন্যায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুক সমান পানি প্রবেশ করেছে। জরুরি ও বহির্বিভাগে পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রয়েছে। এক্স-রে ও ইপিআই টিকা রুমেও পানি প্রবেশ করেছে। হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টারগুলোতে পানি প্রবেশ করায় চিকিৎসকরা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। যার কারণে হাসপাতালের কিছু রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানির কারণে সমগ্র উপজেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা পরিষদ এলাকায় পানি প্রবেশ করায় নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে।
#

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন