গাজী জাহাঙ্গীর আলম জাবির।। কুমিল্লা গোমতি, ডাকাতিয়া, ঘুংঘুরসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। কেউ কেউ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে বন্যায় কয়েক হাজার বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।
বন্যা কবলিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্যসংকট ও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। তারা জানায়, যেখানে দু’বেলা আহার জোটানো কষ্টসাধ্য, সেখানে বাড়িঘর ঠিক করাতো অনেক দূরের কথা। ফলে আপাতত খোলা আকাশের নিচেই থাকতে হচ্ছে তাদের।
বুরবুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বাড়িঘরের পানি কমলেও বাড়িতে তো কিছুই নাই। আমার সাজানো সংসারে কত কিছুই না ছিল।’
মিলন নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘বাঁধ ভাঙার খবরে জানডা লইয়া বাহির হইছি। কিছুই সরাতে পারিনি। পানি কমায় বাড়িতে এসে দেখি, ঘরটা ভেঙে গেছে। আগামী দুই-তিন মাসেও ঘর ঠিক করে উঠতে পারব না।’
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাত। কৃষিতে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর। প্রাথমিক সমীক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছ চাষের আড়াই হাজারের বেশি পুকুর, দিঘি ও ঘের। তবে বন্যা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও মৎস্য চাষিরা।
এদিকে গোমতী নদীর বুরবুড়িয়ায় বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে এখনো পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। তবে প্রবাহের মাত্রা অনেকটা কমে আসছে।
জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, জেলায় ১০ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী আছে। ৭২৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ২২৫টি মেডিকেল টিম এদের চিকিৎসা দিচ্ছে।
জেলা প্রশাসন থেকে ৩৯ লাখ নগদ টাকা ও ৮০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কুমিল্লা জেলায় ১৬ শ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তা ছাড়া কুমিল্লায় পর্যাপ্ত ত্রাণ এসেছে। বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি , প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা এসব ত্রাণ দুর্গতদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন। এছাড়া আজো বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গাউছিয়া কমিটি, আলোকিত যুব উন্নয়ন সংস্থা, কালিকাপুর আব্দুল মতিন খসরু সরকারি কলেজ আশ্রয় কেন্দ্র, ফকির বাজার স্কুল এন্ড কলেজ, গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, আনন্দ সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ভারী ও শুকনো খাবার এবং জামা- কাপড় বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
#