প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : অন্ত:সত্ত্বা, মাতৃদুগ্ধদানকারী এবং অনূর্ধ্ব ১৮ বছরসহ ছয় ধরনের মানুষ মডার্না এবং সিনোফার্মার টিকা পাবেন না। কৃষক, শ্রমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিদেশগামী শিক্ষার্থীসহ ২৮ ক্যাটাগরির মানুষ এই টিকা নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
এক্ষেত্রে প্রত্যেককে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় হয়ে আসতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা পেতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হবে। মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনায় এসব তথ্য সংযুক্ত করা হয়েছে, যা ইতোপূর্বে ছিল না। গত ৬ জুলাই রাতে এ নির্দেশনা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
নির্দেশনায় বলা হয়, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রংপুর, সিলেট, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্নার টিকা দেওয়া হবে। অন্যদিকে দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দেওয়া হবে সিনোফার্মার টিকা। কিন্তু কৃষক, শ্রমিক টিকা নেওয়ার জন্য কিভাবে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আসবেন সে বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মডার্নার টিকা তাপমাত্রা সংবেদনশীল, এটি দেশের সব স্থানে পৌঁছানো, সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। তাই এটি সিটি করপোরেশন এলাকায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে সিনোফার্মার টিকা সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য। তাই এটি সারা দেশে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজারের ও চীন থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া টিকা ঢাকা শহরে প্রদান অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরিই মডার্নার টিকা এবং সিনোফার্মার টিকা সারা দেশে দেওয়া শুরু হবে। এছাড়া এ মাসেই আরও টিকা দেশে আসার কথা আছে। তিনি বলেন, আশা করছি টিকা নিয়ে আর কোনো সমস্যায় আমাদের পড়তে হবে না।
যারা নিতে পারবেন : ১. ৩৫ ঊর্ধ্ব সব জনগোষ্ঠীকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে বেশি বয়সি থেকে ক্রমশ কম বয়সি জনগোষ্ঠীকে প্রাধিকার অনুযায়ী এসএমএস দেওয়া হবে। ২. বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা। ৩. নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। ৪. রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয় তথা মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, বিচারিক ও প্রাশাসনিক কার্যালয়গুলোর কর্মকর্র্তা। ৫. প্রতিরক্ষা কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বর্ডার গার্ড ইত্যাদি বাহিনীর সদস্য এবং কোস্টগার্ড ও প্রেসিডেন্টের গার্ড রেজিমেন্ট। ৬. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার, ভিডিপি। ৭. কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সরাসরি সম্পৃক্ত সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী (চিকিৎসক, সেবিকা ও মিডওয়াই, এসএসিএমও, অলটারন্টে মেডিকেল কেয়ার, হোমিওপ্যাথি, ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট, ওয়ার্ড মাস্টার, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ধোপা, টিকিট ক্লার্ক, কুক-মশালচি, পরিছন্নতাবিষয়ক কর্মী, ফিজিওথেরাপিস্ট, অ্যাম্বুলেন্স চালক এবং অন্যান্য সরাসরি সম্পৃক্ত সেবাদানকারী)। ৮. আইনজীবী (বার কাউন্সিল অনুমোদিত)।
৯. গণমাধ্যকর্মী ১০. জনসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মী ১১. ধর্মীয় প্রতিনিধিগণ ১২. মৃতদেহ সৎকার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ১৩. জরুরি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৪. নৌ-বন্দর, রেল স্টেশন ও বিমান বন্ধরগুলোতে কর্মরত ব্যক্তি ১৫. মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলাগুলো আবশ্যকীয় জনসেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ১৬. নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব আগে নিবন্ধন করবেন কিন্তু এখন পর্যন্ত টিকা পাননি তাদের টিকা দেওয়া হবে।
এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে ১৭. যাদের আগে এসএমএস পাঠানো হয়েছিল কিন্তু কোনো কারণে টিকা নিতে পারেননি তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ক্রমান্বয়ে নিবন্ধিত ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হবে ১৮. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী (জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক অনুমোদিত/নিবন্ধিত) ১৯. সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কালেজের শিক্ষার্থী ২০. সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কর্মী, সরকারি ম্যাটস এবং সরকারি আইএইচটি শিক্ষার্থী ২১. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীগণ (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রেরিত তালিকা অনুযায়ী) ২২. বিডার আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্প কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী (যেমন পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প) ২৩. ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী (যারা আগে টিকা পাননি) ২৪. ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে (এফডিএমএন) জনগোষ্ঠী ২৫. কৃষক, শ্রমিক ২৬. সৌদি আরব ও কুয়েতগামী প্রবাসী শ্রমিকদের ফাইজার টিকার জন্য নির্ধারিত ৭ কেন্দ্র সংরক্ষিত থাকবে।
২৭. সৌদি আরব ও কুয়েতগামী ছাড়া অন্যান্য দেশের প্রবাসী শ্রমিকরা উল্লিখিত ৭ কেন্দ্র ছাড়া অন্য কেন্দ্রে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন ২৮. বিদেশগামী শিক্ষার্থীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হয়ে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করে টিকার আওতায় আসবে।
যাদের টিকা দেওয়া হবে না : ১. অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সি জনগোষ্ঠী ২. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা ৩. টিকা গ্রহণের সময় জ্বর আক্রান্ত বা অসুস্থ ব্যক্তি ৪. টিকাজনিত অ্যালার্জির ইতিহাস রয়েছে এমন ব্যক্তি ৫. প্রথম ডোজ গ্রহণের পর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে ৬. অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, যক্ষ্মা, অ্যাজমা/শ্বাসকষ্ট, কিডনি রোগ, ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন ব্যক্তি, ক্যানসার আক্রান্ত এবং স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিবন্ধিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
টিকা সংক্রান্ত নির্দেশাবলিতে বলা হয়েছে : ১. টিকা কেন্দ্র থাকবে। প্রতি কেন্দ্রে ২টি করে বুথ হবে ২. প্রতিদিন (শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত) সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে কেন্দ্র ৩. টিকা গ্রহীতার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বুথ চালু করতে হবে (১৫০-২০০ জনের জন্য ১টি বুথ, ২০০ জনের বেশি হলে দুটি বুথ চালু করতে হবে) ৪. প্রতি বুথে ২ জন ভ্যাক্সিনেটর ও ৩ জন ভলান্টিয়ার থাকতে হবে ৫. প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার ২৮ দিন পরে ২য় ডোজ দিতে হবে ৬. প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে ১টি নির্দিষ্ট মেডিকেল টিম থাকতে হবে ৭. কেন্দ্রের ফোকাল পারসন সার্বক্ষণিক তদারকি করবেন ৮. এছাড়া টিকা সংক্রান্ত সব ধরনের প্রচার কেন্দ্র নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করবে ৯. নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যারা ইতোমধ্যে নিবন্ধন করেছেন কিন্তু এখনো টিকা পাননি, তাদের টিকা দিতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হবে। ১০. কেন্দ্র পরিবর্তন করে টিকা দেওয়া যাবে না। ১১. আগে অন্য কোনো টিকা দেওয়া হলে তাদের এ টিকা দেওয়া হবে না। ১২. অন্য কোনো দেশে প্রথম ডোজ টিকা নিলে বাংলাদেশে এসে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে না। ১৩. টিকা দেওয়ার পর সুরক্ষা ওয়েব পোর্টালে এ সংক্রান্ত তথ্য তাৎক্ষণিক হালনাগাদ করতে হবে ১৪. টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে।
ভো/কা