প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : প্রকৃতির গর্ভে জন্ম সবারই, বিকাশও প্রকৃতির বক্ষে, কিন্তু নিরুপদ্রবে জীবন-সাফল্য লাভ কেবা পায়? এই যে ফল-ফুল তারাও কি সুখির জীবনের সুষমা ভােগ করে ?
প্রৌঢ় শীতের আম্রকে ধরেই বলি–প্রকৃতির সঙ্গে তাকে বহু লড়াই করেই তাে এই ফলটিকে বেঁচে থাকতে হয়।ভ্রুণকালেই তাকে মেরে ফেলতে চায় কুজঝটিকা শিলাবৃষ্টি, প্রচণ্ড খরা ; এদের উপদ্রবে আমের মুকুল বা গুটিগুলি অসময়ে ঝ’রে যায় বলেই তার নাম রাখা হয়েছে ‘চুত’। গ্রামের মানুষ নিশ্চয়ই জানেন যে—আম্র ভিন্ন অন্য কারও মুকুল বা কচি ফলের জীবন কুয়াশায় যায় না; তাইতাে লােককথায় প্রচলিত—“যত কুয়ো আমের ক্ষয়, তাল তেতুলের কিছু নয়”। অর্থাৎ সােহাগী প্রাণে যেন কোন ধকলই সয় না।
তা ছাড়া এই ফলটির জন্মের প্রাচুর্যে ও অপ্রাচুর্যে প্রকৃতির এমন একটা ইঙ্গিতও নিহিত থাকে যে—এ বৎসর বর্ষণ কেমন হবে, অথবা ধানের ফলনই বা কেমন হবে; এ ক্ষেত্রে সেই খনার বচন “আমে ধান, তেতুলে বান”—এ যেন প্রকৃতির রাডারে ঘােষিত হয় মেঘ-বর্ষণের আগাম সঙ্কেত। যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে আম গাছের পাতা,ছাল, মুকুল, কচি আম,ও পাকা আম। এখন জেনে নেয়া যাক নানা
রােগ প্রতিকারে এর ব্যবহার সম্পর্কেঃ
১। আমাশায়ঃ- কচি আমপাতা ও জামপাতার রস (২/৩ চা-চামচ) একটু গরম করে খেলে আমাশা সারে।
২। দাহ ও বমিভাৰেঃ- যাদের শরীরে দাহ বেশী এবং বমি বমি ভাব প্রায়ই ঘটে, তাঁরা আমপাতা (৩/৪টি) জলে সিদ্ধ করে সেই জলটাকে সমস্ত দিনে একটু, একটু করে খেলে দাহ ও বমির ভাবটা চলে যাবে।
৩। অকালে দাঁত পড়ে যাওয়ায়ঃ- আমপাতা (কচি হলে ভাল হয়) চিবিয়ে তা দিয়ে দাঁত মাজলে অকালে দাঁত নড়েও না, পড়েও না। (ওড়িশায় এখনো গ্রাম বাসী বিয়ের দিনে আমপাতা দিয়ে বরের দাঁত মাজাটা রীতি-ঐতিহ্য।
৪। পােড়া ঘায়ে (দগ্ধ ব্রণে):- আগুনে পুড়ে গিয়ে ঘা হলে আমপাতার পােড়া ছাই (মষাবন্ধাবস্থায় পোড়াতে হবে, অর্থাৎ—পাত্রের মুখে লেপে-শুকিয়ে পােড়াতেহবে, সেটা কালাে হবে) ঘিয়ে মিশিয়ে লাগালে পােড়া ঘা শুকিয়ে যায়।
৫। পা ফাটায়- যাঁদের পা (গােড়ালির অংশ) ফেটে চৌচির হয়ে যায়, তাঁদের ফাটা আরম্ভ হ’লে প্রথম থেকেই ঐ ফাটায় আমগাছের আঠা লাগালে আর বাড়ে না; তবে আমের আঠার সঙ্গে কিছু ধনাের গুড়াে মিশিয়ে দিলে আরও ভাল হয়।
৬। নখকুনিতেঃ- যাঁরা নখকুনিতে কষ্ট পান, তারাও আমগাছের নরম আঠার সঙ্গে একটু ধনাের গুড়ে মিশিয়ে নখের কোণে টিপে দিলে, এ থেকে রেহাই পাবেন।
৭। কেশপতনেঃ- আমের কুশি (কচি আমের অাঁঠির শাস) থেতাে ক’রে জলে। ভিজিয়ে ছেকে নিয়ে সেই জল শুষ্ক চুলের গােড়ায় লাগালে কেশপতন (চুল উঠে যাওয়া) উল্লেখযােগ্যভাবে কমে যায়। ও সময় মাথায় তৈল ব্যবহার না করাই ভাল।
৮। অকালপক্কতায়ঃ- থেতাে করা আমের কুশি ৫/৬ গ্রাম ও শুকনাে আমলকী
২/৩ টুকরাে একসঙ্গে ১০/১২ চা-চামচ নিয়ে লােহার পাত্রে জলে ভিজিয়ে সেটা ছে’কে নিয়ে চুলে লাগালে অকালপক্কতা রােধ করে।
৯। খুসকিতেঃ- আমের কুশি ও হরীতকী একসঙ্গে দুধে বেটে মাথায় লাগালে খুসকি কমে যাবেই; তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে উচিত—ওটি ছেকে নিয়ে মাথায় লাগানাে।
১০। রক্ত পড়াতে:- অাঁঠির শাঁসের রসের বা গুড়াের নস্যি নিলে নাক দিয়ে রক্তপড়া বন্ধ হয়। তবে ব্লাডপ্রেসারের রক্তপড়া বন্ধ করা সমীচীন নয়।
১১। প্রদরে – বীজের শাঁসের গুড়াে ১০/১২ গ্লেণ মাত্রায় জল দিয়ে খেলে বেতপ্রদর কমে যায়। আমের ফুল (মুকুল) চায়ের মত করে পান করলে প্রদর সারে।
১২। রক্ত আমাশায়:- আমগাছের ছালের রস ১/২ চা-চামচ মাত্রায় আধ পােয়া দুধে (ছাগলের দুধ হলে ভাল হয়) মিশিয়ে খেলে রক্ত-আমাশা সেরে যায়। তবে এর সঙ্গে বৃদ্ধ বৈদ্যরা একটু চিনি, না হয় মধু মিশিয়ে খেতে বলেন।
১৩। অতিসারেঃ-আমগাছের ছালের উপরের স্তরটা চে‘ছে ফেলে দিয়ে সেই ছাল গো-দধিতে বেটে খেলে পেট গুড় গুড় শব্দ ও পাতলা দাস্ত বন্ধ হয় এবং সেজন্য দাহ ও বেদনা নষ্ট হয়। আমের কচিপাতা ও কাঁচা কয়েদবেলের শাঁস সমভাবে বেটে চালধােয়া জলের সঙ্গে খেলে পক্কাতিসারের উপশম হয়।
১৪। রক্তপিত্তে (হেমােপটোসিসে):– এ রােগীর পক্ষে খুব মিষ্টি পাকা আমি ঔষধ ও পথ্যরুপে ব্যবহার করার ব্যবস্থা রয়েছে আয়ুর্বেদের প্রামাণ্য গ্রন্থ চক্ৰদত্তে।
১৫। প্লীহাবৃদ্ধিতেঃ- পাকা আমের (মিষ্টি) রস ৭/৮ চা-চামচ মাত্রায় ২-১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে প্লীহাবৃদ্ধি ও তজ্জনিত উপসর্গের উপশম হয়। তবে
বায়ু প্রধান প্লীহা রােগেই ব্যবহার্য।
১৬। অজীর্ণে- অতিরিক্ত মাছ খাওয়ার জন্য অজীর্ণ হলে সেজন্য কাঁচা আম সেব্য। অতিরিক্ত মাংস ভােজনে অজীর্ণ হলে আমের
আঁঠির শাস সেব্য।
১৭। পাঁচড়ায়ঃ- আমের আঠা লেবুর রস অথবা তৈলে মিশিয়ে পাঁচড়ায় ব্যবহার্য।
১৮। উদরাময়েঃ- আমবীজের শাঁসের কাথ আদার রস সহ সেব্য।
১৯! বহমূত্রেঃ-আমের নতুন পাতা শুকিয়ে গুড়াে করে ব্যবহার করলে বহুমূত্র প্রশমিত হয়।
২০। গলাব্যথায়ঃ- আমপাতার ধোঁয়া গলা-বেদনা নিবারিত করে।
তথ্য সূত্রঃ- চিরঞ্জীব বনৌষধি।