প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : গ্রীষ্মের উত্তাপে অন্যান্য গাছ যখন মৃতপ্রায় তখন এই গুল্মলতাটির যৌবন যেন জৌলুষ নিয়েই জনষ্টি আকর্ষণ করে আর ভূমিশয্যায় স্বল্প গণ্ডীতে ছড়িয়ে থাকে; অর্থাৎ সে তার ভিতরের তাপকে সংহরণ করে বলেই অমন রুপ। তেমনি মানুষের শরীরের অন্তরশ্নির রূপ যে পিত্ত, তার আধিক্যকে এ সংযত করে। পরবর্তীযুগে রােগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও ওর ঐ সূত্র ধরেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে এবং তা হওয়াটাই স্বাভাবিক বলে মনে করি। আর এই পিত্তকে পুরো পুরি সুস্থ্য রাখতে পারে গীমা শাক।
গিমা শাক পরিত্যক্ত জমি, আলু, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি ক্ষেতে জন্মে থাকে। যত্ন ছাড়া এই শাক হৃষ্ট-পুষ্টভাবে বেঁচে থাকে। তবে স্যাঁতস্যাঁতে অর্থাৎ কলতলা, পুকুরপাড়ে, নালার পাশে এটি ভালো ভাবে জন্মে। বোটানিকাল নাম Glinus oppositifolius (L.) Aug.DC. এটি Molluginaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।
স্বাদে তিক্ত, কফ পিত্তাধিক্যনাশক ও রুচিকারক, আর রোগারোগ্যের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে পাণ্ডু-কামলা (জণ্ডিস বা তার পূর্বাবস্থা) ইত্যাদি যকৃত-প্লীহাঘটিত যাবতীয় রোগ প্রতিষেধক ও উপশমক।
নব্য ভেষজ বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে:
========================
এই তিক্ত শাকটিতে সাবান জলের মত কতকগুলো ফেনিল পিচ্ছিল পদার্থ আছে, তার নাম স্যাপোনিন, তা থেকে বিশিষ্ট প্রক্রিয়ার দ্বারা কতকগুলো নতুন ধরনের টাইটারপিন জাতীয় দ্রব্য পাওয়া গিয়েছে। বর্তমানে এই শাকটি মানুষের রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে তার বিশিষ্ট উপযোগিতার ক্ষেত্র কি, তার অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
আয়ুর্বেদের দৃষ্টিতে:
================
যেকোনো তরকারী মাত্রেই শাক পর্যায়ভুক্ত, অবশ্য তার শ্রেণীভেদ করা হয়েছে, যথা-পত্র, পুষ্প, ফল, নাল, কন্দ ও সংস্বেদজ (ছত্রাক শাক) শাক; গিমা শাক ছয়টি শ্রেণীর মধ্যেই সমস্ত তরকারী। এগুলি উত্তরোত্তর গুরুপাক, এর মধ্যে পত্রশাকই সর্বাপেক্ষা লঘু। এছাড়া তেল (তিলের তেল এখানে বক্তব্য) দিয়ে সাঁতলে নিয়ে খাওয়া উচিত; এদ্বারা শাকের রুক্ষতা নষ্ট হয়ে হজমের পক্ষে সহায়ক হয়।
বর্তমান সমীক্ষার উপলব্ধ তথ্য:
=====================
১. এই শাক সম্পর্কে একটি বিধিনিষেধ আছে যেসব রমণীর কষ্টরজঃ (ডিসমেনোরিয়া) আছে, আহার্যের সঙ্গে এটি খেলে তারা সে দোষ থেকে রেহাই পাবেন।
২. যাদের স্রাবের আধিক্য আছে, তারা এটা খাবেন না। এই তথ্যটি দিয়েছেন ডাইমক সাহেব। এটার সত্যতা সম্পর্কে আমি নিঃসন্দেহ।
৩. এই শাকটির বিভিন্ন রোগনাশক গুণ থাকলেও আহার্যের সঙ্গে কালে ভদ্রে শাক হিসেবে অথবা ফুলুরির মতো বড়া করে ব্যবহার করে খেলেও কিছু না কিছু উপকার হবেই।
৪. যাদের লিভারের ক্রিয়া মন্দীভূত, সেসব ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন। অল্প পরিমাণ শাক হিসেবে যদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে যকৃতের ক্রিয়া স্বাভাবিকতায় ফিরে আসে। কারণ অন্ন-পানের মাধ্যমেই আমাদের অন্তরাগ্নি ইন্ধন সঞ্চয় করে। তাতেই আমাদের প্রাণ ধারণ সুষ্ঠ হয়। এ আবিষ্কার আজকের নয় চরক সংহিতার চিকিৎসা প্রচলনের যুগে। এই অভিমত আজও স্বীকৃত ও অপরিবর্তিত।
লোকায়তিক ব্যবহার:
১. চোখ উঠলে: চোখ দিয়ে পিচুটি পড়লে, গিমে পাতা সেকে নিয়ে তার রস ফোঁটা ফোঁটা করে চোখে দিলে, চোখের করকরানি কমে, পিচুটি পড়া বন্ধ হয়।
২. অম্ল পিত্ত রোগে যাদের বমি হয়, তারা গিমে পাতার রস ১ চামচ এবং তার সঙ্গে আমলকী ভিজানো জল আধকাপ মিশিয়ে সকালে খাবেন, অচিরেই বমি করা কষ্ট দূর হবে।
তথ্যসূত্রঃ চিরঞ্জীব বনৌষধি।