1. provatsangbad@gmail.com : প্রভাত সংবাদ : প্রভাত সংবাদ
  2. mdjoy.jnu@gmail.com : dainikjoybarta.online : Shah Zoy
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
কুমিল্লায় প্রবাসীর সম্পত্তি দখলের অভিযোগ, ন্যায়বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল কর্তৃক বর্বরোচিত হত্যার প্রতিবাদে কুমিল্লায় ইসলামী ছাত্রসেনার বিক্ষোভ কুমিল্লায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এর অবহিতকরণ অনুষ্ঠানে মৃতের পরিবারের মাঝে দের কোটি টাকার চেক বিতরণ এবারের নির্বাচন আনন্দমূখর হবে – মোবাশ্বের আলম ভূইয়া ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের প্রত্যয়ে দৈনিক আজকের জীবন পত্রিকার আয়োজনে ইফতার মাহফিল কুমিল্লা মহানগরীর শ্যুটার রাজিব গ্রেফতার মাহে রমজান সংযম, ত্যাগ, ধৈর্য্য ও শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয়: সফিকুর রহমান কুমিল্লার বরুড়া প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত গোমতী নদীতে মাটি কাটার ব্যাপারে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না- জেলা প্রশাসক কুমিল্লা সংযম সাধনার মাসে বাজারে ভোগান্তি কেন?

নিজেকে একটু সতেজ নির্মল করে তুলতে ঘুরে আসুন কুমিল্লা (প্রথম পর্ব)

  • প্রকাশিত: শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১
  • ২৪৭ বার পড়া হয়েছে

মোঃ রজ্জব আলী।। জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায় বলতে হয়, থাকব না কো বদ্ধ ঘরে দেখব এবার জগৎটাকে। হাঁ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ভ্রমণ আনন্দের মাঝেই জগৎটাকে ঘুরে দেখেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু কোথায় যাবেন? কোথায় গেলে একটু আনন্দ, সৌন্দর্য উপভোগ করা কিংবা ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যাবে? সে চিন্তাও অনেকের রয়েছে।
করোনা মহামারীর কারনে কঠোর লকডাউনের ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-মান থমকে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা থেকে নিজেকে একটু সতেজ নির্মল করে তুলতে ঘুরে আসতে পারেন, শিক্ষা, সংস্কৃতি , ঐতিহ্য’র প্রাচীন জনপদ কুমিল্লা।
ঢাকা- চট্টগ্রামের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে এ জেলাটি, যার ফলে যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুবই ভালো। বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকেই আসা হোকনা কেন, অতি সহজেই আসা যায় এ জেলায় যদি ঢাকা হয়ে আসতে হয় তাহলে সোজা সায়েদাবাদ হয়ে আসা খুবই সহজ। এশিয়া, তৃষা কিংবা অন্য অনেক গাড়ি আছে ভাড়াও কম মাত্র ২০০ টাকা হলেই আসা যায়। ঢাকা থেকে মাত্র ৯৭ কিলোমিটার রাস্তা, যাত টুকু দেরি হবে তা সায়েদাবাদেই। এরপর এই গাড়িগুলোও, কোথাও দাঁড়ায় না। সোজা চলে যাবে কুমিল্লা দেড় থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন রসমালাই আর খাদি কাপড়ের জন্য বিখ্যাত এ জেলাটিতে।
এছাড়া দেশের যে কোনো জেলা থেকে কুমিল্লা যেতে আপনি রেলপথ বা সড়কপথের যে কোনোটি বেছে নিতে পারেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনেও যেতে পারেন কুমিল্লায়।

প্রশ্ন হলো কুমিল্লায় যাবো কিন্তু সেখানে কি আছে? দেখবটা কি?
ভারতের ত্রিপুরার মহা রাজারা গ্রীষ্মকালীন সময় অবকাশ যাপনের কেন্দ্র হিসেবে গোড়াপত্তন করেছিলেন গোমতীর তীরের এই কুমিল্লায়। কুমিল্লার বুকজুড়ে রয়েছে আদি নিদর্শন। যেমন-
ওয়ার সিমেট্রি, শালবন বিহার, শালবন, রুপবানমুড়া, ইটাখোলামুড়া,ময়নামতি ঢিবি , রানীর বাংলো, নীলাচল পাহাড়,ময়নামতি জাদুঘর,ফান টাওয়ার,ওয়াটার পার্ক, ধর্মসাগর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়,পুরান এয়ারপোর্ট এলাকা, লালমাটির লালমাই পাহাড় এবং গোমতী নদী।
হাতে সময় থাকলে আরো ঘুরে আসতে পারেন: সচীনদেব বর্মণের বাড়ি,অভয় আশ্রম, নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়ি,মুরাদনগরের জাহাপুর জমিদার বাড়ি,জামবাড়ি,নূরজাহান ইকো পার্ক,রাজেশপুর ইকো পার্ক,কেটিসিসি পর্যটন কেন্দ্র,শাহ সুজা মসজিদ,বায়তুল আজগর জামে মসজিদ,নূর মানিকচর জামে মসজিদ,৭০০ বছরের প্রাচীন মসজিদ, চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন
প্রাচীন সভ্যতার নীরব সাক্ষী।

ওয়ার সিমেট্রি: ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি’ কুমিল্লাতে অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত ব্রিটিশ, কানাডিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, আফ্রিকান, জাপানী, আমেরিকান, ভারতীয় ও নিউজিল্যান্ডের ৭৩৭ সৈন্যের সমাধিস্থল এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫০০০ কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন, তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মায়ানমার, আসাম এবং বাংলাদেশে ৯টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি দৃষ্টিনন্দন স্থানও বটে।

বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র আছে, যার একটি কুমিল্লায় এবং অপরটি চট্টগ্রামে অবস্থিত। কুমিল্লা ছিলো তখনকার একটি অত্যন্ত বৃহৎ হাসপাতাল ও সমর সরবরাহ কেন্দ্র এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাটি। তারপরও ১৯৪৪ সালের অক্টোবর মাসে ইস্ফলে স্থানান্তরিত হওয়া অবধি চতুর্দশ সেনাবাহিনীর সদর দফতর। এখানকার ৭৩৬টি সমাধিতে সমাহিত প্রধানত হাসপাতালের মৃতরা। তবে যুদ্ধের পর বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ক্ষেত্র থেকে স্থানান্তরিত কিছু শবও এখানে রাখা হয়েছে। বাহিনীওয়ারী হিসেবে এতে অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন ৩ নাবিক, ৫৬৭ জন সৈনিক ও ১৬৬ জন বৈমানিক। যুদ্ধকালীন সময়ের সমাধি ছাড়া এখানে আরো একটি কবর আছে। সারিবদ্ধভাবে সমাধিস্থল যেমন আপনাকে শ্রদ্ধাবনত করবে, তেমনি পরিপাটি, পরিচ্ছন্নতা মুগ্ধ করবে আপনাকে। ভালো লাগবে।

শালবন বিহার : আগে এই প্রত্নতত্ত্বটি শালবন রাজার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু খননের পর ১১৫ টি ভিক্ষু কক্ষ বিশিষ্ট একটি বৌদ্ধ বিহার নামে অভিহিত করা হয়। বিহারটির মধ্যভাগে একটি মন্দির ও উত্তর বাহুর মাঝামাঝি স্থানে প্রবেশ তোরণ দেখতে পাবেন। এটাই এর মূল আকর্ষণ। বিহারটিতে ৪টি ও কেন্দ্রীয় মন্দিরে ৬টি নির্মাণ যুগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। খননে প্রাপ্ত একটি পোড়ামাটির মুদ্রক থেকে জানা যায়, এই বিহারটি দেব বংশের ৪র্থ রাজা শ্রীতবদেব খ্রিষ্টীয় আট শতকে নির্মাণ করেছেন। সুতরাং এর আসল নাম ছিল ভবদেব মহাবিহার। এই বিহারে খননে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ প্রত্নবস্তু ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।

ইটখোলা মুড়া : শালবন বিহারের উত্তর-পশ্চিমে কালিবাজার সড়কের সংলগ্ন উত্তর কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত আরেকটি প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনের নাম ইটাখোল মুড়া। বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প এর উত্তর পাশের টিলায় ইটাখোলা মুড়া অবস্থিত। পাশাপাশি দুটি প্রাচীন প্রত্নস্থাপনার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এগুলো একটি মন্দির ও অপরটি বিহার। আবিস্কৃত পুরাবস্তুগুলোর মধ্যে চুনবালিজাত উপকরনে তৈরি একটি বড় আকারে লোকত্তোর বৃদ্ধ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উপরে উঠতে হয়। এখানে একটি বৌদ্ধ মূর্তি আছে। মূর্তিটির উর্ধাংশ জাদুঘরে স্থানান্তরিত হয়েছে। প্রায় সর্বদাই দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে এ স্থানটি।

আনন্দ বিহার : ময়নামতি লালমাই পাহাড়ের অসংখ্য বৌদ্ধ স্থাপত্য কীর্তির মধ্যে আনন্দ বিহারই সর্ববৃহৎ। অষ্টম শতকের দেব বংশীয় প্রভাবশালী রাজা আনন্দ দেব কর্তৃক এখানে শালবন বিহারের অনুরূপ একটি বিশাল বৌদ্ধ বিহার স্থাপিত হয়েছিল। এখানে আবিষ্কৃত সম্পদের মধ্যে মৃন্ময় দীপ, বৌদ্ধ দেব-দেবীর বিভিন্ন ব্রোঞ্জের মূর্তি, মদ্রালিপি সম্বলিত ফলক, মৃৎ পাত্র ও গুটিকা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

রূপবানমুড়া : ইটাখোলা মুড়ার দক্ষিনে কালিবাজার সড়কের অপর পার্শ্বে অবস্থিত অপর একটি প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনের নাম রুপবান মুড়া। কোটবাড়িতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ একাডেমী ফর রোরাল ডেভেলপমেন্টর প্রধান ফটকের অদূরে এ স্থানটি অবস্থিত। এটি সমভূমি থেকে ১১.মি উঁচু টিলার উপর নির্মিত। তিনটি বসতি আমলের অস্তিত্ব রয়েছে এই শৈলীতে। ক্রুসাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত রূপবান মুড়াটি। পেছনের অংশটি মূর্তিকোঠা এবং সামনেরটি মণ্ডপ। মূর্তির চারদিকে আছে ঘোরানো পথ। প্রত্মমানের বিচারে মন্দির ও বিহারটি খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর নির্মিত যা আজও কালের সাক্ষী। খননকার্যের পর এখানে একটি বিহার, একটি মন্দির, একটি ক্ষুদ্র স্তূপ ও একটি উচ্চ মঞ্চের স্থাপত্য নিদর্শন উন্মোচিত হয়। এখানকার কারুকাজ খচিত প্রাচীন মন্দিরটি সত্যিই দেখার মতো।

চন্ডিমুড়া মন্দির : কুমিল্লা শহরের ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে জেলার লাকসাম-বরুড়া-সদর এ তিন উপজেলার মিলনস্থল। পাশেই ছোট্ট পাহাড়। এর চুড়ায় ২ একর ৬৮ শতক জায়গাজুড়ে চণ্ডি ও শিব নামক দুটি মন্দির। চন্ডি মন্দিরের নামানুসারে এলাকাটি কালক্রমে চন্ডিমুড়া হিসেবে পরিচিতি পায়। এর অদূরেই রয়েছে দুতিয়া দীঘি। মন্দিরকে ঘিরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় তিনটি উৎসব। এতে দেশ বিদেশের বহু ভক্ত-দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।

কুটিলা মুড়া : এই স্থানটি শালবন বিহার থেকে উত্তরে তিন মাইল দূরে ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চলে অবস্থিত। খননের ফলে এখানে প্রাচীনকালের তিনটি স্তূপ নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।

চারপত্র মুড়া : এই স্থানটি কুটিলা মুড়া থেকে প্রায় ১.৫০ মাইল উত্তর পশ্চিমে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থিত। এই পাহাড়ের শীর্ষ দেশ সমতল, আকারে ছোট এবং আশপাশের ভূমি থেকে ৩৫ ফুট উঁচু। ১৯৫৬ সালে সামরিক ঠিকাদারদের বুলডোজার ব্যবহারের ফলে একটি ছোট চতুষ্কোণ বৌদ্ধ মন্দির আবিষ্কৃত হয় এখানে। যা আয়তনে পূর্ব পশ্চিমে ১০০ ফুট দীর্ঘ ও উত্তর দক্ষিণে ৫৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট ছোট এই চতুষ্কোণ বৌদ্ধ মন্দির আবিষ্কৃত হয়।

রানীর বাংলো : জেলার বুড়িচং উপজেলার সাহেববাজারের কাছে আছে রাণী ময়নামতির প্রাসাদ স্থানীয়রা একে বলে রানীর বাংলো। রানীর বাংলো অবস্থিত কুমিল্লা-সিলেট সড়কের পাশে। এর দেয়ালটি উত্তর-দক্ষিণে ৫১০ ফুট লম্বা ও ৪শ’ ফুট চওড়া। সেখানে স্বর্ণ ও পিতলের দ্রব্যাদি পাওয়া গেছে। এটি রীতিমতো ছোটখাটো একটি পাহাড়ের চূড়াতেই অবস্থিত অষ্টম শতকের স্থাপনা।
(চলবে)
তথ্য সূত্র : চ্যানেল আই অনলাইন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন