প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : কুকুরশোঁকা- উদ্ভিদ একটি ছোট গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। ১-২ ফুট উচু হতে দেখা যায়, কাণ্ড রোমশ। এটি সরল, তবে পাতা ও কাণ্ডের সংযোগস্থল থেকে ছোট ছোট শাখাও বের হয়। পাতা ডিম্বাকার কিন্তু বোঁটার দিকটা ক্রমশঃ সরু, কিনারা ঢেউ খেলানো, সক্ষম রোমশ, মনে হয় যেন পশম দিয়ে তৈরী, কিন্তু এতে একটা গন্ধ আছে এবং সেটি কুকুরের খুব প্রিয়, তাই এই গাছ শুকলেই মূত্রত্যাগ করে, এইজন্যই এর প্রচলিত নাম “কুকুরশোঁকা”। গুচ্ছবদ্ধ ফুল হয়, ভেতরটা একটু, হলদে, পরে সেটা বীজকোষে পরিণত হয়, এই বীজগুলি দেখতে অনেকটা সোমরাজী বীজের মত এবং এর ছোট পুচ্ছ হয়, যার জন্য সে প্যারাসুটের মত উড়ে যেতে পারে, এইভাবেই সে তার বংশবিস্তার করে।
কুকুরশোঁকা-এর অন্যান্য নাম
এই গণের প্রায় ৬০টি প্রজাতি সমগ্র এশিয়া, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমান। এটি বন্যগুল্ম, তবে বিশেষভাবে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও সিঙ্গাপুরে দেখতে পাওয়া যায়। এর সংস্কৃত নাম কুকুন্দর, বাংলায় প্রচলিত নাম কুকুরশোঁকা, বনমূল্লো ও হিন্দীতে কুকুরোয়ান্দা নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম Blumea lacera Dc ও ফ্যামিলি Compositae.
গুণাগুণ
ইহা স্বাদে তিক্ত, ক্রিমিনাশক ও জ্বরনাশক। মল উষ্ণ, ঝাঁঝালো ও তিক্তরসান্বিত, বেদনানাশক, রক্তদষ্টিতে ও শ্বাসজনিতরোগে হিতকর ও মূত্রকারক। ঔষধাৰ্থ প্রয়োগ হয় পাতার রস মরিচ সহযোগে রক্তার্শে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়, তাছাড়া এর রস রক্তরোধক হিসেবেও কাজ করে। মরিচসহ মূল সেবনে কলেরা রোগের নিবৃত্তি হয়ে থাকে। ঔষধ হিসাবে ব্যবহার্য অংশ- সমগ্র গাছ।
কুকুরশোঁকা-এর ভেষজ উপকারিতা
প্রথমেই বলে রাখি, এই কুকুশিমার রস রসবহ স্রোতেই দ্রুত কাজ করে। তবে আর একটা বিষয় জানা থাকা ভালো, কোন প্রজাতির কুকশিমার গাছটা ব্যবহার করা উচিত সেটাকে চিনে নেওয়া, কারণ পাশ্চাত্ত্য উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে এই ধরনের ১৮ প্রকার গাছ দেখা যায়, সেটার পার্থক্য জনসাধারণের বিচার করে নেওয়া একরকম অসম্ভবই বলা যেতে পারে। তবে গাঁয়ের লোকের ধারণা, যে গাছটাকে শুঁকে কুকুরে প্রস্রাব করে সেইটাই কুকুরশোঁকা বা কুকশিমার গাছ; কথাটা কিন্তু ঠিকই।
১. পুরাতন পেটের দোষ, কিবা পুরাতন আমাশয়: এর বিশেষ লক্ষণ হলো, মলের সঙ্গে আম সর্বদা পড়বে না, আবার পেটের দোষও তেমন বোঝা যায় না, কিন্তু তাঁদের উপসর্গ হয়, ভোরের দিকে মুখটা শুকিয়ে যায়, আর একটু করে জল খেতে হয়, এটা কিন্তু পিপাসার জন্য তাঁরা জল খান না, মুখটা শুকিয়ে যাচ্ছে, তাই এক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে তাঁর রসবহস্রোত বিকারগ্রস্ত হয়েছে এবং শোষণ আসছে।
এক্ষত্রে কুকশিমার শিকড় ৪-৫ গ্রাম (কাঁচা) (শক হলে ৩ গ্রামের) একটা টুকরা নিয়ে মুখে রাখতে হবে এবং মাঝে মাঝে একটু, চিবিয়ে ওই রসটা গ্রহণ করতে হবে। এর দ্বারা মুখের শোষণটা কমে যাবে। তাছাড়া ওই রসটা পেটে গেলে পুরনো আমাশায় ও পেটের দোষটা কেটে যাবে।
২. অজীর্ণ দোষে: এই অজীর্ণ রোগটা প্রকৃতপক্ষে কোন মৌল রোগ নয়, বায়ু, পিত্ত এবং কফের এক একটিকে প্রধান করে অগ্নিমান্দ্য হলে তবে এই রোগটি উৎপন্ন হয়। এই রোগটি পিত্তজন্য অগ্নিমান্দ্য হ’লেও হবে, কফজন্য অগ্নিমান্দ্য হ’লেও হবে। তাছাড়া বায়ুর জন্য অগ্নিমান্দ্য হলেও হবে। আবার ঋতুবিকারের কারণে যে অগ্নিমান্দ্য দেখা দেয় সেটা থেকেও অজীর্ণ রোগ এসে যায়।
এই জাতীয় অজীর্ণ দোষ পেটে পুষে রাখলে এরা প্রায়ই রক্তপিত্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে থাকেন। এর পূর্বেরূপ হবে, গলায় আঙ্গুল দিয়ে গলাটা পরিষ্কারের চেষ্টা, জিভটা যাতে পরিষ্কার থাকে তার জন্য তৎপর হওয়া। এইসব লক্ষণ দেখা দিলে, মূলসমেত কুকশিমার গাছকে থেতো করে রস নিংড়ে, তাকে গরম করে তা থেকে এক চা-চামচ রস সকালের দিকে একবার এবং বৈকালের দিকে একবার খেতে হবে।
তবে একটু দুধ মিশিয়ে খাওয়াই ব্যবস্থা। প্রথমে একবার ক’রে খাওয়াই ভাল। আর একটা কথা জানা দরকার যে, কোন সময় গরম অবস্থায় কোন জিনিসই খাওয়া সমীচীন নয়। পান খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা ত্যাগ করাই উচিত, তবে যদি রক্তপিত্ত দেখা দেয় তাহলে বন্ধ করতে হবে, নইলে নয়।
৩. চোখে ঠাণ্ডা লাগায়: যাঁদের চোখে ঠাণ্ডা লেগে চোখ করকর ও টনটন, করে লাল হয়, ফলে যায়—এক্ষেত্রে ওই কুকশিমা গাছের হলদে ফুল অল্প গরম জলে ধুয়ে নিয়ে, সেটা হাতে র’গড়ে তা থেকে এক ফোঁটা রস চোখে দিতে হবে। আর ওই গাছ সমল মিহি করে বেটে তা থেকে নিংড়ে রস নিয়ে সেই রস চোখের চারিপাশে লাগালে চোখের লাল হওয়াটা কেটে যাবে।
৪. শোথে: পা ঝুলিয়ে রাখলে অনেকের পা ফুলে যায়, তখন বুঝতে হবে যে রক্তবহ স্রোতগুলির তাপ কমে যাচ্ছে, যার জন্য রসবহ স্রোতের তাপটা মন্দীভূত হওয়াতে রসটাকে দ্রুত সঞ্চারিত করতে পারছে না; তাই পা দুটো ফুলে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কুকশিমার শিকড় বেটে, একটু গরম করে পা দুটিতে প্রলেপ দিলে ওই ফোটা আর হবে না।
৫. চুলকানিতে: এ রোগে যাঁরা অক্লান্ত হয়েছেন তাঁরা ধরে নিতে পারেন যে, তাঁদের রক্তদৃষ্টি আসছে, কারণ এটা এক ধরনের চর্মরোগ। এক্ষেত্রে কুকশিমার সমগ্র গাছটিকে মিহি করে বেটে সেটাকে গায়ে মাখতে হবে। ঘণ্টাখানেক বাদে সেটা ধুয়ে ফেলতে পারেন। এইরকম ৪-৫ দিন গায়ে মাখলে ওটা সেরে যাবে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য রচিত,
চিরঞ্জীব বনৌষধি।