প্রভাত সংবাদ ধর্ম ডেস্ক : চেহারায় অগ্নিশিখা প্রজ্জলিত করার মাধ্যমে শাস্তিঃ
জাহান্নামে শুধু আগুন আর আগুনই হবে। জাহান্নামীদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীর
আগুনের মাঝে নিমজ্জিত থাকবে। এর পর ও কোরআন মাজীদে কোন কোন অপরাধী সম্পর্কে
বর্ণিত হয়েছে যে,তাদের চেহারায় আগুনের শিখা প্রজ্জলিত করা ও চেহারাকে আগুন দিয় গরম
করার কথা উল্লেখ হয়েছে।
আল্লাহ বলেনঃ“ঐ দিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃংখলিত অবস্থায়।তাদের জামা হবে আল
কাতরার, আর অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমন্ডল”। (সূরা ইবরাহিম- ৪৯,৫০)
আল্লাহ্ মানব শরীরকে যে বৈশিষ্ট দিয়েছেন তা সম্পকে তিনি বলেনঃ
لقد خلقنا الإنسان في أحسن تقويم (سورة التين -4)
অর্থঃ “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম আকৃতিতে”। (সূরা ত্বীন – ৪)
মানুষের সমস্ত শরীরের মধ্যে চেহারাকে আল্লাহ্ সুন্দর, ইজ্জত, মাহাত্মের নিদর্শন করেছেন। তৃপ্তী
দায়ক চোখ, সুন্দর নাক, মানানসয়ী কান, নরম ঠোট, গন্ডদেশ যৌবনকালে কাল চুল মানুষের
সৌন্দর্য ও আকৃতিকে আরাে উজ্জ্বল করে। আবার বৃদ্ধ বয়সে চাঁদির ন্যায় সাদা চুল মানুষের
সম্মান ও মহত্মের নিদর্শন। চেহারার ঐ সম্মান ও মহত্মের মর্যাদায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) এ নির্দেশ দিয়েছেন যে,“স্ত্রীকে যদি মারতে হয় তাহলে তার চেহারায় মারবে না”।
(ইবনে মাযাহ)
চিকিৎসা শাস্ত্রে চেহারা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় অধিক সমবেদনশীল। চোখ, কান, নাক,
দাঁত, গন্ডদেশ ইত্যাদির রগসমূহ মস্তিষ্কের সাথে সম্পৃক্ত। চেহারা মস্তিষ্কের নিকটবর্তী হওয়ার
কারণে রক্তের চলাচল শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি দ্রুত। তাই সামান্য রাগের কারণে
চেহারার রগ দ্রুত লাল হয়ে যায়। চেহারার এক অংশে কোন সমস্যা হলে সমস্ত চেহারাই ঐ
সমস্যায় জর্জরিত হয়ে যায়। যদি শুধু দাঁতে কোন ব্যাথা হয় চোখ,কান, মাথায় ও ব্যাথা
অনুভব হয়। আর এ ব্যাথা এত বেশি হয় যে,এ সময়ে মানুষের সময় যেন অতিক্রান্ত হয়না। সে
যত দ্রুত সম্ভব তা থেকে রক্ষা পেতে চায়। শরীরের এ সমবেদনশীল অংশে যখন জাহান্নামের
অত্যাধিক গরম আগুনের শিখা প্রজ্জলিত করা হবে,তখন কাফেরদের কত কঠিন ব্যাথা সহ্য
করতে হবে,তার অনুমান জাহান্নামীদের এ আফসােস থেকে অনুভব করা যায় যে,তারা বলবে ?
অর্থঃ “হায় আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম” (সূরা নাবা – ৪০)
অপরাধিদেরকে যখন মারপিট করা হয়,তখন তারা সাধারণত হাত দিয়ে চেহারাকে বাঁচাতে চেষ্টা
করে। কিন্তু অনুমান করা হােক যে যখন একদিকে অপরাধিদের হাত-পা ভারি জিঞ্জির দিয়ে বাঁধা
থাকবে,অন্য দিকে জাহান্নামের ভয়ানক ফেরেশতা বিনা বাধায় তার চেহারায় আগুনের বৃষ্টি বর্ষণ
করতে থাকবে। মূলত তাকে শারীরিক শাস্তির সাথে সাথে মারাত্বক অপমান ও লাঞ্ছনাও করা
হবে। আর এ লাঞ্ছনা দায়ক শাস্তি এক বা দু’ঘন্টা বা এক বা দু’সপ্তাহ,এক বা দু’মাসের জন্য বা
এক বা দু’বছরের জন্য নয়,বরং তা সার্বক্ষণিক ভাবে চলতে থাকবে।
আল্লাহর বাণী :
“হায় যদি কাফেররা ঐ সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে অগ্নি
প্রতিরােধ করতে পারবে না,আর তাদের কোন সাহায্যও করা হবে না”। (সূরা আম্বীয়া – ৩৯)
কোন বদ নসীব এ লাঞ্ছনাময় শাস্তির যােগ্য হবে ? এব্যাপারে আল্লাহ্ তা’লা অত্যন্ত স্পষ্ট করে
বলেছেনঃ
“যে দিন তাদের মুখমন্ডল অগ্নিতে উলট-পালট করা হবে,সে দিন তারা বলবে হায়! আমরা যদি
আল্লাহকে মানতাম এবং তাঁর রাসূল কে মানতাম। তারা আরাে বলবেঃহে আমাদের প্রতিপালক
! আমরা আমাদের নেতা ও বড় লােকদের আনুগত্য করেছিলাম। আর তারা আমাদেরকে পথ
ভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন। আর তাদেরকে দিন
মহা অভিসম্পাত”। (সূরা আহযাব – ৬৬,৬৮)
যেহেতু পাপিষ্টদের অন্যায় এ হবে যে,তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিপক্ষে তাদের সরদার,গুরুদের অনুসরণ করেছে,কাফেরদের কুফুরী আর মুশরেক দের শিরকের এ অবস্থা হবে যে,তারা তাদের আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূরের অনুসরণ করে নাই বরং তাদের আলেম,দরবেশ,লিডার,বাদশাদের অনুসরণ করেছে। যার বেদনাদায়ক শাস্তি তাদেরকে কিয়ামতের দিন ভােগ করতে হবে।
আমাদের নিকট কাফের মােশরেকদের তুলনায় ঐ সমস্ত মুসলমানদের আচরণ বেশি বেদনা
দায়ক যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের কালেমা পাঠ করেছে, কিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস রাখে,জান্নাত
ও জাহান্নামকেও স্বীকার করে। কিন্তু এতদসত্বেও কোন না কোন ভুল বুঝের কারণে রাসূলের
অনুসরণ থেকে দূরে সরে গিয়েছে।
মনে রাখুন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিশন যেমন কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান
থাকবে, তেমনিভাবে তার অনুসরণও কিয়ামত পর্যন্ত করে যেতে হবে।
وما أرسلناك إلا كافة للناس بشيرا ونذيرا (سورة سبأ-۲۸)
অর্থঃ“আমি মানুষের নিকট তােমাকে সু সংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী রূপে প্রেরণ করেছি”।
(সূরা সাবা- ২৮)
অন্যত্র এরশাদ হয়েছেঃ
يا أيها الناس إلي رسول الله إليكم جميعا (سورة الأعراف -۱۵۸)
অর্থঃ “হে মানব মন্ডলী! আমি তােমাদের সকলের প্রতি আল্লাহ্ রাসূল (রূপে প্রেরিত হয়েছি)”।
(সূরা আ’রাফ – ১৫৮)
এমনিভাবে আরাে এরশাদ হয়েছে ?
تبارك الذي نزل الفرقان على عبده ليكون للعالمين نذيرا (سورة الفرقان -۱)
অর্থঃ“কত মহান তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফোরকান(কোরআন)অবতীর্ণ করেছেন।যাতে
তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে”। (সূরা ফোরকান – ১)
অতএব যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মিশনকে তাঁর জিবীত থাকা পর্যন্তই সিমীত বলে বিশ্বাস করে নিঃসন্দেহে তারা তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে। আবার যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে শুধু আল্লাহ্’র বার্তাবাহক রূপে মেনে নিয়ে তাঁর
নির্দেশিত পথ(হাদীসের)অকাট্যতাকে অস্বীকার করছে তারাও তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট
হচ্ছে। আর যারা এ আক্বীদা পােষণ করে যে কোরআন মাজীদই হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট এর
সাথে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর হাদীসের কোন প্রয়ােজন নেই তারাও তাঁর
অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে”। (সূরা নাহাল ৪৪ নং আয়াত দ্রঃ)
এমনি ভাবে যারা এ আক্বীদা পােষণ করে যে, কোরআন মাজীদ নির্ভরযােগ্য সূত্রে সংরক্ষিত
আছে কিন্তু হাদীস নির্ভরযােগ্য সূত্রে সংরক্ষিত নেই । তাই তার ওপর আমল করা জরুরী নয়।
তারাও তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে”। (সূরা হিযর ৯ নং আয়াত দ্রঃ) ।
যে সমস্ত উলামাগণ স্বীয় ফিকহী মাসআলার গােড়ামীর কারণে,স্বীয় ইমামগণের কথাকে রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর হাদীসের ওপর প্রাধান্য দেয় তারাও তাঁর অনুসরণের
ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে।
এমনি ভাবে যারা স্বীয় বুযুর্গদের মােরাকাবা ও কাশফকে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
এর হাদীসের ওপর প্রাধান্য দেয় তারাও তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে। এমনি ভাবে
যারা স্বীয় আকাবেরগণের মােশাহাদা ও স্বপ্নকে রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর
সুন্নাতের ওপর প্রাধান্য দেয় তারাও তাঁর অনুসরণের ব্যাপারে পথভ্রষ্ট হচ্ছে”। (সূরা হুযরাত ১
নং আয়াত দ্রঃ) ।
আমরা অত্যন্ত আদব ও ইহতেরামের সাথে, মুসলমানদের সমস্ত গবেষণালয়ের নিকট,অত্যন্ত
নিষ্ঠতা ও হামর্দদী নিয়ে আবেদন করছি যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর
অনুসরণের বিষয়টি অত্যন্ত সূক্ষ। এমন যেন না হয় যে,ইমাম গণের আক্বীদা,বুযর্গদের
মােহাব্বত,আর নিজস্ব দর্শণের গােড়ামী আমাদেরকে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তিতে নিষ্পেশিত করে। কেন না আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর এ ধরণের বেদনাদায়ক
পরিণতি ক্ষতির কারণ হবে।
أنا لك هو الخسران المبين (سورة الزمر-۱۵)
অর্থঃ“জেনে রেখ এটা সুস্পষ্ট ক্ষতি।” (সূরা যুমার – ১৫)
………….(চলব)
তথ্য সূত্র : জাহান্নামের বর্ণনা।
#প্রভাত সংবাদ/র আ/২৭