প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : দেশে ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৫ আসামি পলাতক রয়েছে। ওয়ারেন্টভুক্ত এসব আসামির মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত রয়েছে ৯৩ হাজার ২২৩ জন। আর তদন্ত ও বিচারিক কাজ চলমান আছে এমন মামলার আসামি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪৩২ জন।
ফেব্রুয়ারিতে দেশের আদালতগুলো থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় ৪ হাজার ৮৭২ জনের বিরুদ্ধে। ওই মাসে পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করেছে ৪ হাজার ৩৩৫টি। সারা দেশ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরোয়ানাসংক্রান্ত যে তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরে এসেছে তাতে এ চিত্র উঠে এসেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মাসে জেনারেল রেজিস্ট্রার (জিআর) মামলায় এক হাজার ১২৬ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আর (কোর্ট রেজিস্ট্রার) সিআর মামলায় পরোয়ানা জারি করা হয় তিন হাজার ৬৪৬টি। অন্যদিকে জিআর মামলায় ১ হাজার ২৫০ এবং সিআর মামলায় ৩ হাজার ৮৫টি ওয়ারেন্ট তামিল করা হয়। পুরাতন যেসব মামলার আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি তাদের ধরতে শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে। রোজা ও ঈদকে ঘিরে শুরু করা হবে বিশেষ অভিযান।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, পলাতক আসামির সংখ্যাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তাদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা ধরে ইতোমধ্যেই সারা দেশে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ ও র্যাব। এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত বেশকিছু আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিও আছে। গ্রেফতারের পর আসামিদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে বছরের পর বছর লুকিয়ে থাকার কাহিনী। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ৪৮ আসামিকে ধরতে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে তাদের মধ্যে মানব পাচারকারী আছেন চারজন। তারা হলেন-মিন্টু মিয়া, স্বপন, নজরুল ইসলাম মোল্লা ও তানজিরুল। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী মারা গেলেও এখনো তার নামে ইন্টারপোলে নোটিশ ঝুলছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই রেড নোটিশ জারি আছে। অন্য যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডসহ নানা অভিযোগে ওয়ারেন্ট রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই মামলায় ১৪ আসামিকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
আসামিদের মধ্যে পলাতক পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি আজিজুল হক ও এনামুল হক নামের গ্রেফতারি পরোয়ানা দীর্ঘ ২১ বছরেও সংশ্লিষ্ট থানায় পৌঁছেনি। ১ মার্চ এই দুই জঙ্গির একজন (আজিজুল হক) ধরা পড়ার পর তাদের কাছ থেকে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত ২১ বছর তারা দেশেই অবস্থান করেছিলেন। রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত আট জায়গায় তারা আয়েশি জীবনযাপন করেছেন। পরোয়ানা মাথায় নিয়েই করেছেন বিয়ে। পলাতক থেকেই ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর নাম বদল করে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেন। ২০০৮ সালে করেন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। বানিয়েছেন পাসপোর্টও। পরোয়ানা থাকার পরও আলোচিত এই মামলার আসামি মোসহাব হাসান ওরফে রাশু, লোকমান, ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, পরোয়ানাপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেফতার এড়িয়ে চলছে পুলিশ। থানায় বছরের পর বছর ওয়ারেন্ট পড়ে আছে। এ কারণে আসামিরা আদালতে হাজির হচ্ছে না। তাই বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তিও দেওয়া যাচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপস অ্যান্ড মিডিয়া) হায়দায় আলী খান বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ঝুলে থাকা পরোয়ানা কীভাবে দ্রুত তামিল করা যায়, সে বিষয়ে পরবর্তী ত্রৈমাসিক সভায় বিভিন্ন ইউনিট প্রধান ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের তাগিদ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একাধিক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পরোয়ানাপ্রাপ্ত কোনো আসামির সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ওয়ারেন্টের কপি হাতে পাওয়ার পর পুলিশ সংশ্লিষ্ট আসামিদের ধরতে বাড়িতে যায়। আসামি বাড়িতে না থাকলেও তার কাছে খবর চলে যায়। পরে তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়ে নেন। এ কারণে অনেক সময় ওয়ারেন্ট তামিল করা সম্ভব হয় না।
ডিআইজি হায়দায় আলী খান বলেন, যখনই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে তখনই পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরোয়ানাপ্রাপ্ত আসামিদের ধরতে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানো হয়। ঈদ ও রোজায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে দণ্ডপ্রাপ্ত এবং পলাতক আসামিদের ধরতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি, বিট পুলিশিং এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের তৎপরতা বাড়ানোর কারণেই সম্প্রতি অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার পলাতক আসামি ধরা পড়ছে।
#তথ্য সূত্র : যুগান্তর।