1. provatsangbad@gmail.com : প্রভাত সংবাদ : প্রভাত সংবাদ
  2. mdjoy.jnu@gmail.com : dainikjoybarta.online : Shah Zoy
শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
গোমতী নদীতে মাটি কাটার ব্যাপারে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না- জেলা প্রশাসক কুমিল্লা সংযম সাধনার মাসে বাজারে ভোগান্তি কেন? দেশে গণতন্ত্র উত্তোরণে বড় বাধা মব জাস্টিস বন্ধ চায় ইসলামী ফ্রন্ট  কুমিল্লায় অবৈধ ইটভাটা অপসারনের দাবীতে প্রতিবাদ সমাবেশ দৈনিক ইবি নিউজ ২৪ এর খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা হানকির জলায় অবৈধ ভাবে ফসলি জমির মাটি কাটার বিরুদ্ধে অভিযান, জব্দ ৩ টি ড্রাম ট্রাক,আটক-১ কুমিল্লায় হত্যা মামলায় যুব মহিলালীগ নেত্রী গ্রেফতার কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধে বৃদ্ধকে হত্যা,গ্রেফতার-৮ কুমিল্লায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে যৌথ তদারকি অভিযান ইফতারের দোয়া ও গুরুত্ব

কুমিল্লায় আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষি ব্যবস্থা

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০২২
  • ১৮৬ বার পড়া হয়েছে

শিশির সমরাট।। কুমিল্লায় আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষি ব্যবস্থা। বীজতলা থেকে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে রয়েছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। এক সময় লাঙল-জোয়াল আর ‘হালের বলদ’ ছিল কৃষকের চাষাবাদের প্রধান উপকরণ সে জায়গা এখন দখল করে নিয়েছে ‘আধুনিক লাঙল’ ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, কম্বাইন্ড হার্ভেপার, ব্রডকাস্ট সিডার পাওয়ার রিপার মেশিন। এমনকি ফসল ফলানোর জন্য জমি চাষ, বীজ বপন, নিড়ানি, সার দেয়া, কাটা, মাড়াই, ফসল ঝাড়া ও প্যাকেটিং পর্যন্ত সব কিছুই করা হচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। ফলে কৃষিতে উৎপাদন বাড়ছে, কমছে উৎপাদন ব্যয়।

কৃষিবিদদের মতে, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে ফলে কৃষিতে বিপ্লব এসেছে। এখন কম জমিতে চাষাবাদ করে অনেক বেশি ফসল পাওয়া যায়। কুমিল্লা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বর্তমানে কুমিল্লার মোট আবাদি জমির ৭০-৭২ ভাগ চাষাবাদ হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। যদি শতভাগ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায় তাহলে সব পর্যায়ে রীতিমতো বিপ্লব ঘটবে কৃষিতে।

কুমিল্লার কৃষিবিদ মোখলেছুর রহমান বলেন, কৃষি যন্ত্রসামগ্রী নির্মাণ দেশের অর্থনীতি এবং কুমিল্লার কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ খাতটি এখনো ভারি শিল্প হিসেবে চিহ্নিত। তিনি জানান, গ্রামীণ শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখনও কৃষিকাজ করে। এ হার ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশে নেমে আসবে।। ফলে কৃষিযন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান তরুণরা কৃষিতে আগ্রহী নয়। ৮০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা মুজুরি দিয়ে ধান চাষ সম্ভব নয়। কাজেই যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া কৃষকের বিকল্প নেই।
মোখলেছুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পরে যন্ত্রের মাধ্যমে সেচের কারণে আবাদ বেড়েছে। বোরো মৌসুমে ধান চাষ করে কুমিল্লার মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি চাল উৎপাদনও সম্ভব হয়েছে যান্ত্রিকীকরণের কারণে। আগামী দিনে আরো কুমিল্লায় হারভেস্টর, ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মতো কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জমি চাষ থেকে ফসল মাড়াই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তি সরকারি উদ্যোগে কৃষিতে ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহারে সুফলও মিলছে। ধানের উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। ধানের মতো গমের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। আলু, ভুট্টারও হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বেড়েছে।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের মতে ধান চাষে লাভ করতে হলে কৃষককে যান্ত্রিকীকরণে আসতে হবে। যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদ করলে খরচ যেমন কম হয় তেমনি ফসল ফলে বেশি। এ ছাড়া, গতানুগতিক পদ্ধতিতে ফসলের অপচয়ও হয় বেশি। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। গতানুগতিক পদ্ধতি ও যান্ত্রিকীকরণ পদ্ধতির তুলনা করে দেখা গেছে কৃষিতে টিকে থাকতে হলে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। বোরো ধান সেচ, সার ও কীটনাশক নির্ভর। ফলে এর জন্য নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন হয়। এতে খরচও বৃদ্ধি পায়।

প্রতি বিঘা জমিতে বীজতলা তৈরি, চারা লাগানো, নিড়ানি দেয়া, ধান কাটা ও মাড়াইসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত কৃষি মজুর লাগে ২৫ জন। বীজের দাম, সারের দাম, তিনবার সেচ দেয়া, দু’বার কীটনাশক প্রয়োগ করা ও জমির ভাড়াসহ (বা খাজনা) এক বিঘা জমিতে ধান চাষে খরচ পড়ে প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে গড়ে ফলন হয় ১৮ থেকে ২০ মণ ধান। বোরো মওসুমে কৃষককে ধান বিক্রি করতে হয় ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। এ ধান কেটে বিক্রি কৃষকের ঋণের টাকা পরিশোধ, মজুরি পরিশোধ, কীটনাশকের দাম, পানির টাকা পরিশোধসহ অন্য প্রয়োজন মেটাতে কৃষক ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। কৃষকরা জানান, যে স্বপ্ন ও আশা নিয়ে তারা ধান চাষ করেন, ধান ঘরে এলে সে স্বপ্ন ও আশা ভঙ্গ হয়।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ফসল কাটা ও ফসল বপনসহ সিজনের সময় শ্রমের যে মজুরি কৃষককে গুণতে হয় তাতে যন্ত্র ছাড়া কোনো উপায় নেই। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, তেমনি সময় ও শ্রম সাশ্রয় হয়। কৃষিকাজে সবচেয়ে শ্রম ও সময়নির্ভর কাজ হচ্ছে চারা রোপণ বীজ বপন ও ফসল কর্তন। মৌসুমের নির্দিষ্ট সময় এ কাজগুলো সম্পন্ন করে ফসল ঘরে তুলতে সম্প্রতিকালে কুমিল্লার কৃষকেদের বেশ সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। এ সময় কৃষি শ্রমিকের মজুরি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। কখনো কখনো দ্বিগুণ মজুরি দিয়েও কৃষি শ্রমিক পাওয়া যায় না। এ ছাড়াও শ্রমিকের অভাবে বিলম্বে ফসল কর্তন ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদিত শস্যেও বড় একটি অংশ নষ্ট ও অপচয় হয়। এ ছাড়া আগাম এবং সময়মতো ফসল বিক্রি করতে না পারলে কৃষক উপযুক্ত মজুরি পায় না।

মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী বপনযন্ত্র দিয়ে বীজ বপন করতে পারলে ফসলে জীবনকাল ১০-১২ দিন কমানো সম্ভব। তথ্য মতে, এক একর জমির ফসল শ্রমিক দিয়ে কর্তন ও মাড়াই কাজে গতানুগতিক পদ্ধতিতে ব্যয় হয় ৮ হাজার ৬৬৮ টাকা। অথচ মিনি কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে একই কাজে ব্যয় হয় তিন হাজার ৯৪২ টাকা। অন্য দিকে, এক একর জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্ট দিয়ে চারা লাগাতে খরচ হয় এক হাজার ৬০০ টাকা। আর শ্রমিক দিয়ে ব্যয় হয় ছয় হাজার টাকা। এখানে লক্ষণীয় যে, কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে কাজ করার ফলে এক একর জমিতে গতানুগতিকের চেয়ে ৯ হাজার ১২৬ টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। অর্থাৎ এ ৯ হাজার ১২৬ টাকা তার লাভ। কৃষিযন্ত্র দিয়ে চাষাবাদ ও ফসল কর্তন ও মাড়াই করলে শস্যের অপচয় কমে ৫-১০ ভাগ।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কৃষি ষান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে দানা শস্যের উৎপাদন আরও বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। উন্নত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রযুক্তি প্রয়োগে শস্য উৎপাদনের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও ফসল কর্তনোত্তর ক্ষতি কমানোর মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।তিনি জানান, যান্ত্রিকীকরণের বহুবিধ সুবিধাদির ফলে কৃষক দিন দিন কৃষিযন্ত্রের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে কৃষকদের ফসল উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে একটা ফসল থেকে আর একটা ফসল লাগানোর মধ্যবর্তী সময় কমে যাওয়ায় কৃষকরা বছরে এখন ২টা ফসলের স্থানে ৩টা ফসল অনায়াসেই করতে পারছে। এমনকি সুনির্দিষ্ট শস্য বিন্যাস ও স্বল্প জীবনকালের ফসল নির্বাচন করে যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে বছরে ৪টি ফসল পর্যন্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
#

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন