প্রভাত সংবাদ ডেস্ক : নিজের জন্য বাঁচতে শেখাটাই আসলে বড় চ্যালেঞ্জ।
আপনি কত বড় অফিসে, কত বড় অফিসার পোস্টে চাকরি করেন এটা কখনোই নির্ধারণ করে না যে, আপনি কত বেশি সুখী! বরং এটা শুধু নির্ধারণ করে আপনি কত বড় মেধাবী।
জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন বড় মেধাবী হওয়াতে নয়, বড় চাকরি করাতে নয়। জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন সুখে থাকাতে।
নিজেকে কখনো সময় দিয়েছেন?
একটু ভালোবেসেছেন?
আপনি ম্যাজিস্ট্রেট হলে তা নিয়ে গর্ব করবে আপনার পরিবার। কিন্তু দিনশেষে হিসেব করে দেখুন, আপনি অফিসের কাজ সামলানো এক শ্রমিক ছাড়া কিছুই না।
আপনি পুলিশের এসপি হলে তা নিয়ে প্রাউড ফিল করবে আপনার ছোট ভাই। কিন্তু দিনশেষে আপনি ক্রিমিনালের পেছনে দৌঁড়ঝাপ করা এক ক্লান্ত শ্রমিক ছাড়া আর কিছুই না।
রাতে যে ৬ ঘন্টা আপনি ঘুমান, সেটাও কি আপনি নিজের জন্য ঘুমান? না! পরদিন সকালে অফিসে ডিউটি আছে বলেই আগের দিন রাতে ঘুমিয়ে নিজেকে রিচার্জ করে নেন। তার মানে আপনার রাতের ঘুমটা পর্যন্ত অন্যের অফিস ডিউটির জন্যই। তাহলে আপনি নিজের জন্য, নিজের সুখের জন্য এই এতটা বছরে কতটা ঘন্টা ব্যয় করেছেন?
আপনি কোট টাই পরা এক ব্যাংক অফিসার। এটা নিয়ে গ্রামে আপনার চাচা খুব গর্ব করে বলে- “ভাতিজা আমার এসি রুমে বসে চাকরি করে।” অথচ হিসেব মিলাতে মিলাতে আর বসের ঝাড়ি খেতে খেতে আপনি এসি রুমে বসেও ঘেমে যান প্রায়ই। এ হিসেব কে রাখে?
দিনশেষে আপনি ক্লান্ত এক শ্রমিক ছাড়া কিছুই না। তাহলে দিনশেষে আপনার প্রাপ্তিটা কী?
সুখটা কোথায়?
আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে অন্যেরা যখন গর্ব করছে, প্রাউড ফিল করছে; আপনি তখন কাজের চাপে নিঃশ্বাস ফেলার সময়ও পাচ্ছেন না। যদি কিছু সময় নিজের জন্য নাই বা থাকলো, যদি নিজেকে সুখি করা নাই বা গেলো, তবে এত আয়োজন কিসের জন্য?
আপনি যখন ওভারটাইম করে মাসের স্যালারিটা একটু বড় করার জন্য রাত জাগছেন, আপনার ঘরের লোকজন হয়তো তখন প্ল্যানিং করছে আপনার ওভারটাইম ডিউটির এক্সট্রা স্যালারিটা দিয়ে কোথায় শপিং করবে?
আপনি যখন বোনাস পান, তখন সেই বোনাসের টাকা খরচ করার প্ল্যানিং করে অন্যেরা।
কিন্তু দিনশেষে আপনার সুখটা কোথায়?
এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হাজব্যান্ড কী করেন?
মেয়েটি উত্তর দিয়েছিলো – “আমাকে ভালোবাসে।” উত্তরটা হার্টকে খুব টাচ করেছিল।
হাজব্যান্ডের ক্যারিয়ারের চেয়েও তার কাছে ভালোবাসাটাই গর্বের বিষয় ছিল।
আমরা সেরা ক্যারিয়ার গড়তে চাই, সবচেয়ে দামি গাড়িটা কিনতে চাই, সবচেয়ে ডিজাইনেবল বাড়িটা বানাতে চাই। কিন্তু একটু গভীরভাবে খেয়াল করে দেখুন তো, আপনি কেন এতসব চান?
আসলে জীবনে আপনি সুখি হতে চান। আপনি জীবনে যা কিছুই করেন, তার সবটা নিয়ে সুখি হবে অন্যরা। আর দিনশেষে আপনি ক্লান্ত শ্রমিকই থাকবেন।
আপনি কাজ করেন অফিসের জন্য, বাসায় থাকেন পরিবারের জন্য, রাতে ঘুমান তাও পরদিন অফিস ডিউটির জন্য, তাহলে নিজের জন্য করছেনটা কী?
মাঝে মাঝে নিজেকে খুব একা একা সময় দিতে হয়, নিজের সাথে নিজেকে কথা বলতে হয়। এই যে আপনি কোট টাই পরে বের হোন, সেটাও কিন্তু অন্যের চোখে ভাল লাগার জন্য। বস, আপনার জীবনের সবটাই তো শুধু অন্যের জন্য। শুধু রাতে ঘুমানোর সময় যে নাইট ড্রেস পরেন, দিনশেষে সেটাই আপনার কমফোর্টেবল ড্রেস। এই একটা কাজই নিজের জন্য করেন।
নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন, নিজেকে একটু সময় দিন। আজ যে দিনটা চলে যাচ্ছে সেটা কাল আর আসবে না। ৭০ বছরের গড় আয়ুর এই জীবনে ৭০ সেকেন্ডও যেন আপনাকে আফসোস করতে না হয়। যা করার করে ফেলুন আজই, যা বলার তা বলে ফেলুন আজই।
আমি বিশ্বাস করি, আফসোস ছাড়া বেঁচে থাকার নামই সফলতা। সবচেয়ে প্রিয় গানটা আজকেই শুনুন, সবচেয়ে প্রিয় বইটা আজকেই পড়ুন, সবচেয়ে প্রিয় জায়গায় আজকেই চলে যান। সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে আজকেই বলে দিন ভালোবাসি। কালকের দিনটা আজকের মত করে আর নাও আসতে পারে।
(সংগৃহীত)
আঞ্জুমান আরা’র ওয়াল থেকে নেয়া।