প্রভাত সংবাদ ডেস্ক: সকালে উঠে ব্রাশ করছি। বোতলে জল খাচ্ছি। তার পর টিফিন বাক্সে খাবার ভরে নিয়ে অফিস, স্কুল বা কলেজে দৌড়চ্ছি। কাঁধে ব্যাগ। সারা দিন ঘরের বাইরে চলছে চা–কফি। বাড়ি ফিরে রাতে বালিশে মাথা। মাঝে, আগে, পরে আরও অনেক কিছু। বিষয় সেসব নয়। বিষয় হল প্লাস্টিক। সকালের ব্রাশ থেকে রাতের বালিশ— সবের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে প্লাস্টিক। ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে রোজ আমরা গিলছি এই প্লাস্টিক। কতটা জানলে চোখ কপালে উঠবে। বিশেষজ্ঞরা যা আশা করেছিলেন, তার থেকে ১০০ গুণ বেশি। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রোজ ৭০০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক পার্টিক্ল (প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা) শরীরে ঢুকছে আমাদের। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে। খাবারের মাধ্যমে। গবেষণা করেছে ইউকের পোর্টসমাউথ হাসপাতাল। একটা শিশুর দুধের বোতল থেকে সফট টয়েজ, সবেতেই প্রধান উপাদান প্লাস্টিক। আমাদের বালিশ, বিছানা, কার্পেট পর্যন্ত তৈরি হয় সিন্থেটিক থেকে। আর সেসব থেকে প্লাস্টিকের অনু কণা ঢুকে পড়ছে শরীরে। অন্য একটি গবেষণা বলছে, একটি বাচ্চার বেডরুমে প্রতি মিনিটে ২৮ প্লাস্টিক পার্টিকেল পাওয়া যায়। যেখানে রান্নাঘরে প্রতি মিনিটে ২ প্লাস্টিক পার্টিকেল মেলে। সুতরাং বাচ্চাদের যে কতটা ক্ষতি হচ্ছে, তা স্পষ্ট। ক্ষতি হচ্ছি জানি, কিন্তু কী ক্ষতি হচ্ছে সেই সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। পোর্টসমাউথ হাসপাতালের রেসপিরেটরি স্পেশালিস্ট অনুপ চৌহান জানালেন, ‘প্লাস্টিকের এই পার্টিক্ল বা অনু–কণা শরীরে প্রবেশ করলে বিপাক ক্ষমতার হেরফের হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধাক্কা খেতে পারে। এমনকী প্রজননের ক্ষমতাও কমিয়ে দিতে পারে। সর্বোপরি এভাবে চললে হতে পারে ক্যানসার।’ ডা. চৌহান মনে করিয়ে দিলেন, তামাক সেবন বা অ্যাসবেসটস এবং কয়লা পোড়ালে যতটা ক্ষতি হয় শরীরের, প্লাস্টিকের পার্টিকলও ততটাই ক্ষতি করে। কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকোলজি নিয়ে গবেষণা করছেন আমন বসু। তিনি জানালেন, প্লাস্টিক ভেঙে ভেঙে তৈরি হয় মাইক্রো এবং ন্যানো প্লাস্টিক। এই ক্ষুদ্র কণা মানবদেহের ক্ষতি করছে, তা প্রমাণিত। কতটা, সেই নিয়ে গবেষণা চলছে। এর ফলে যে ক্যানসার হয় বা হতে পারে, সেই নিয়েও কাজ চলছে। সামুদ্রিক জীবকে যে ক্রমেই মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক, তা কিন্তু অনেক আগেই প্রমাণিত। আমন জানালেন, ২০১৬ সালে পৃথিবীর বুকে মোট ১৮৮ মিলিয়ন টন (১৮ কোটি ৮০ লক্ষ টন) প্লাস্টিক ছিল। ২০৪০ সালে সেই সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৩৮০ মিলিয়ন টনে (৩৮ কোটি টন)। সুতরাং এখনই যদি প্লাস্টিক উৎপাদনে লাগাম পরনা ওনা হয়, তাহলে সমস্যা জটিল হবে। কারণ প্লাস্টিক জিনিসটা অক্ষত অবস্থায় থেকে যায় ৫০০ বছর। তার পরে তার কী হয়, সেটাও কিন্তু আমরা জানি না। তাই ২০ মিনিটের ব্যবহারের জন্য সেই প্লাস্টিককে কেন বেছে নবে, এটা ভাবার সময় এসেছে। এই প্লাস্টিক বর্জ্য কীভাবে নিষ্কাশন হবে বা কী করা হবে, সেই ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আ/কা